ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

তালাকের ক্ষোভে জামাতার বিরুদ্ধে শাশুড়ির ধর্ষণ মামলা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও নিন্দা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৫ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৭, ৫ আগস্ট ২০২৫

তালাকের ক্ষোভে জামাতার বিরুদ্ধে শাশুড়ির ধর্ষণ মামলা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও নিন্দা

ছবিঃ সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পারিবারিক বিরোধ থেকে জন্ম নিয়েছে এক ব্যতিক্রমী ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মেয়েকে তালাক দেওয়ার ক্ষোভে জামাতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন শাশুড়ি—এমন অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাঁচগাতিয়া গ্রামের এই ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই পাঁচগাতিয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে শাহ জালালের (৩৩) সঙ্গে একই এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে হৈমি আক্তারের (২৫) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিয়ের প্রথম মাসেই হৈমি সন্তান ধারণ করলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এ সময় সে স্বামী শাহ জালালকে ‘সহজ-সরল’ আখ্যা দিয়ে রাজমিস্ত্রির সংসার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও সে আর ফিরে আসেনি। তার মা পান্না আক্তার সাফ জানিয়ে দেন, এমন ছেলের ঘরে মেয়েকে দেবেন না এবং কাবিনের টাকা ফেরত না পেলে মামলা করবেন।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে শাহ জালালের বিরুদ্ধে কাবিনের টাকা আদায়ে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন হৈমি আক্তার। ২০২২ সালের ৩০ জুন আদালত রায় দেন, শাহ জালালকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭ টাকা দিতে হবে। তবে মামলা দায়েরের আগেই শাহ জালাল বিদেশে পাড়ি দেন।

২০২৫ সালের ১৫ জুলাই দেশে ফিরে এলে, হৈমি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, "আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি, মায়ের কথায় এসব করেছি, আমাকে নিয়ে যান।" ১৬ জুলাই দুপুরে শাহ জালালের তিন চাচা, বড় বোন ও বোনজামাতা তাকে আনতে গেলে তার মা পান্না আক্তার কটূ ভাষায় গালাগাল করেন এবং কাবিনের টাকা দাবি করেন। কাবিনের টাকা না দিলে জেলে পাঠানোর হুমকিও দেন তিনি।

১৭ জুলাই শাহ জালাল স্ত্রীর কাছে সংসার করবে কিনা জানতে চাইলে হৈমি স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানায়। পরে শাহ জালাল নোটারির মাধ্যমে তালাকনামা প্রদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তালাকের খবর পেয়ে ওই রাতেই শাশুড়ি পান্না আক্তার মেয়েকে নিয়ে শাহ জালালের বাড়িতে যান এবং পুলিশ ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নাটক সাজান।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হলে গ্রামের সেকান্দর আলীসহ অনেকে বলেন, শাহ জালাল সহজ-সরল ছেলে। বিয়ের তিন মাস পরেই স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়। বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এখন সে বিদেশ থেকে ফিরে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে তালাক দিলে মা-মেয়ে ক্ষোভে নাটক সাজিয়ে তাকে ফাঁসিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

বাদী পান্না আক্তার গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, "শাহ জালাল যখন রাজমিস্ত্রির কাজ করতো, তখন আমার মেয়ে ভালো ছিল। এখন বিদেশ থেকে এসে টাকা ওয়ালা হয়েছে, তাই তালাক দিয়েছে। তাকে জেলে পচাবো। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে হলে আমার উপরে যারা আছে, তাদের সঙ্গে বুঝে নেন, তারা বললে বলব, না হলে না।"

এ বিষয়ে আচমিতা ইউপি চেয়ারম্যান মতি মিয়া বলেন, "বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সমাধান হয়নি। এখন মেয়ের মা মামলা করেছে। আদালতে মামলা হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। আদালতের রায়ই মান্য হবে।"

কটিয়াদি মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, "মেয়ের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং শাহ জালালকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।"
 

 
 

মারিয়া

×