
গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সবাই বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করছেন না
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের ভোগাই নদীর তীরে এলাকার গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ভোগাইপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মাণ করা হয়েছে ৭০টি ঘর। এসব নির্মিত ঘর গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সবাই বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করছেন না। এর মধ্যে বর্তমানে ৪০টি ঘরেই তালা ঝুলছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর বরাদ্দ পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে বেশিরভাগ উপকারভোগী চলে গেছে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায়। ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসব ছাড়া কখনো এসব ঘরের তালা খুলতে দেখা যায় না। ঘরে যদি কেউ না থাকেন এরকম প্রকল্পের ঘরের কি দরকার এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা। তাছাড়া বরাদ্দ প্রাপ্তরা ঘরে যদি নাই থাকেন তাহলে নতুন করে অন্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
শুধু মরিচপুরান ইউনিয়নের ভোগাইপাড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়, এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলার একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান না থাকার কারণেই ঘর ফেলে ঢাকা চলে যাচ্ছেন উপকারভোগীরা। কেউ কেউ আবার নামমাত্র ঘর দখল করে ফের আগের বাড়িতেই বসবাস করছেন। টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণের ঘর অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চারটি ধাপে সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন সরকার। জমি ও গৃহহীনদের বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য উপজেলার ন্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলায় একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকশ’ ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ঘর প্রদান করা হয়। তবে এসব ঘর প্রদানে বেশ কয়েক জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এরকম এক প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের ভোগাইপাড় গ্রামে। এখানে বেশিরভাগ ঘরে তালা ঝুলে আছে। আর উপকারভোগীর অনেকেই ঘর রেখে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকাতে।
আরও জানা গেছে, তৎকালীন সময়ে সরকার খাস জমি উদ্ধার করে ৭০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে একটি করে বিল্ডিং ঘর নির্মাণ করে দেন। ঘরের সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। তবে এখানে বর্তমানে ৪০টি ঘরেই ঝুলছে তালা। খোঁজ মিলছে না উপকারভোগীদের। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এইসব ঘরে বসবাসকারীরা জানান, এখানে ঘর দিলেও কর্মের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই জীবিকার তাগিদে চলে গেছে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে।
কেউ কেউ আবার আগের বাড়িতে চলে গেছেন। দুই একজন উপকারভোগী ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন অন্যদের কাছে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা চাম্পা বেগম (৫০) বলেন, সরকার আমাদের ঘর দিছে। কিন্তু কাজকামের ব্যবস্থা করে দেয় নাই। এর জন্য অনেকে বাইরে কাজকাম করে মাঝে মাঝে এখানে আসে।
ভোগাইপাড় গ্রামের আমিনুল ইসলাম (৫৫) বলেন, এখানের বেশিরভাগ ঘরগুলো যাদের নিজস্ব বসতবাড়ি আছে তাদের নামে বরাদ্দ করা। যার ফলে ঘরগুলো সব সময় তালা দিয়ে আগের বাড়িতে থাকে।
একই গ্রামের অধিবাসী ইয়াসমিন আক্তার (৩০) বলেন, এখানে সব ঘরে লোক থাকে না। মাঝে মাঝে অনেক অসহায় পরিবার একটু আশ্রয়ণের আশা নিয়ে এখানে আসে যাদের কোনো ঘরবাড়ি নাই। আমরা তাদেরকে চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি আনার জন্য পাঠিয়ে দেই যেন তারা তালাবদ্ধ ঘরগুলো আগের ব্যক্তির নাম বাতিল করে নিজেদের নামে বরাদ্দ করেন। তাহলে তারা এখানে বসবাস করতে পারবেন।
এদিকে, যারা আশ্রয়ণের ঘরে থাকে না তাদের বদলে অন্য দরিদ্র অসহায়দের এসব ঘরে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল বলেন, ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কতগুলো ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে এ বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েও বসবাস না করে তালা ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্যানেল হু