ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

চাঁদপুরে পাটের বাম্পার ফলনের আশা

শ্যামল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১০:১০, ২৬ জুলাই ২০২৫

চাঁদপুরে পাটের বাম্পার ফলনের আশা

ছবি: জনকণ্ঠ

আমাদের দেশে পাট-শিল্প ছিল একসময়কার প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট চাষে দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রেখে চলছে চাঁদপুর জেলা। জেলায় এবার পাট (সোনালি আঁশ) চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা। ইতোমধ্যেই মাঠজুড়ে পাটের সবুজ সমারোহের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার শুরুতেই এ নতুন পাট বাজারে উঠবে। দাম ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কৃষকরা বেশি চাষ করেছে। খরচের তুলনায় লাভ বেশি এ চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। নিচু ও দোআঁশ জমিতে এ পাট চাষ হয়ে থাকে এবং কৃষকরা বিভিন্ন জাতের পাট বীজ সংগ্রহ করে বপন করেছে। বিশেষ করে ইরি-বোরো ধান কাটার পরেও সেই জমিতে এ লাভজনক পাট চাষ করা হয়েছে এবং গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাট চাষ শেষ হয়েছে।

চাঁদপুর জেলায় এবার চরাঞ্চলসহ সদর উপজেলায়-৭৫১৫, হাজীগঞ্জ-২০৫৫, মতলব উত্তর-৯৯৪, মতলব দক্ষিণ-৪৬০৮, শাহরাস্তিতে-৬৭.৭, কচুয়ায়-১৭২২ এবং হাইমচর উপজেলায়- ৪৭৩৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাট চাষ করা হয়েছে। এসব পাটের মধ্যে রয়েছে দেশি, তোষা, কেনাফ ছাড়াও মেস্তা পাটও চাষাবাদ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রায় ৩ যুগ আগে এ জেলার বিভিন্ন স্থানে লাভজনক নানা জাতের পাট চাষ হতো। এসব পাট কাটা ও ধোয়ার কাজে গ্রামাঞ্চলে হিড়িকও পড়ে যেত এবং পাটের শোলায় খাল-বিল ও নদী-নালার ঘাট স্তূপ করে রাখতো। পাট চাষে খরচ বাদে লাভের অঙ্কও ভালো ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে জুট মিল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্রমাগতভাবে পাটের কদর ও চাষাবাদ হ্রাস পেতে থাকে।

সদর উপজেলা ইব্রাহিমপুর চরের কৃষক মোবারক আলী বলেন, এবছর আমি ৫ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে, আশা করি পাটের দামও ভালোই পাব। বিভিন্ন খরচ বাদে লাভের আশা করা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাট চাষের ওপর বিভিন্ন বীজ ও সার বিতরণ করার ফলে অনেক উপকৃত হয়েছি, আশা করি এ বছর ভালোই লাভ হবে।

সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের কৃষক রবিউল আলম বলেন, বেশ কয়েক বছর পর এবার আমার ৬০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলনও ভালো হয়েছে, আশা করি দামও ভালো পাব।

তবে পাট শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সাল থেকে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রমাগতভাবে বেশ কিছু জুট মিল পুনরায় চালু হতে থাকে। এজন্য পাটের চাহিদা ও দামও কিছুটা বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের পরামর্শে আবারও এ পাট চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠে কৃষকরা। গত বছরের চেয়ে এবার চাঁদপুরে পাট চাষাবাদ বেশি হয়েছে এবং দামও ভালো থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আবু তাহের বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের পাট চাষ করেছে। খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এ চাষ বাড়ছে। এবার এ চাষে বাম্পার ফলনেরও আশা করা হচ্ছে। মাঠজুড়ে এ পাটের সবুজ সমারোহ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পাট চাষে নানান পরামর্শ দেওয়ার ফলে কৃষকগণ পাট চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

মুমু ২

×