ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

মেয়ের কাছে হার মেনে মধ্যস্থতা চাইছেন মা

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪৬, ১৫ জুলাই ২০২৫

মেয়ের কাছে হার মেনে মধ্যস্থতা চাইছেন মা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সিএমএম আদালতে বাবা-মার বিরুদ্ধে মামলা করে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তরুণী মেহরিন আহমেদ। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনে তিনি জন্মদাতা পিতা-মাতার কাছ থেকেই সুরক্ষা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। এই ঘটনা শুধু সমাজে নাড়া দিয়েছে নয়, আঘাত করেছে বাঙালি পারিবারিক ঐতিহ্যের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধে।

 

 

 

কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরেছে। মাসখানেক পর মেহরিনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তার আইনজীবী জানান, মা এখন মধ্যস্থতা চান। ইতোমধ্যে একটি কাউন্সিলিং ও আলোচনার চিঠি পেয়েছেন তারা। মেহরিনের মা তাকে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং পারিবারিক দূরত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, বাবা-মা দুজনই কর্মজীবী হওয়ায় মেয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মাঝে একটি "গ্যাপ" তৈরি হয়েছিল। যদিও তারা এখন একই ছাদের নিচে থাকেন, তবে বাস্তবতা হলো—গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রায় নেই।

 

অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা সামাজিক বন্ধন ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও প্রতিটি পরিবারে এমন ঘটনা নেই, কিন্তু এটিও একমাত্র নয়। সমাজে হয়তো আরও অনেক ঘটনা ঘটছে নীরবে, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।’’

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে অভিভাবকদের আত্মবিশ্লেষণ করার, সন্তানকে শুধু শিক্ষিত করলেই চলবে না—তাকে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার ও পারিবারিক বন্ধনের চর্চায়।

 

উপমহাদেশে পারিবারিক সম্পর্কের অবক্ষয়ের নজির থাকলেও সন্তান কর্তৃক বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘটনা বিরল। তবে সম্পূর্ণ নতুনও নয়। ২০১৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের রাফায়েল স্যামুয়েল নামে এক যুবক “অনুমতি না নিয়ে জন্ম দেয়ায়” তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

 

ঢাকার আদালতে এমন ধরনের মামলার আর কোনো দৃষ্টান্ত এখনো পাওয়া যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যদি মধ্যস্থতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যায়, তাহলে তা হতে পারে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত, যেখানে সম্পর্কের টানাপড়েন শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নেয় মানবিকতার।

ছামিয়া

×