
ছবি: জনকণ্ঠ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে চাঁদাবাজির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তিকে থানা হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। থানার জানালার গ্লাস, আসবাবপত্র, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও একটি পুলিশ গাড়িসহ সরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাস ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও মির্জারকোর্ট এলাকার সামছুল হকের ছেলে সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্তদের থানায় আনা হলে মুহূর্তে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পাটগ্রাম থানায় অতর্কিত হামলা চালায়। থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, জানালা-দরজা ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করা হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের রাবার বুলেট ছোঁড়ার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশের বলে দাবি পুলিশের। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের দাবিতে হাতীবান্ধা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হলেও ওই থানার সামনেও মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল হামলাকারীদের সহযোগীরা।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পাথর-বালু মহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন দাবি করেন, পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও পুলিশের নির্যাতনে বেশ কয়েকজন জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
পাটগ্রাম থানায় এই হামলা ও সংঘর্ষের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলীয় সংগঠক সারজিস আলম। তার অভিযোগ, সাজাপ্রাপ্ত চাঁদাবাজদের ছাড়াতে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় এবং পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম ও লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ডিআইজি বলেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের থানা হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে দুর্বৃত্তরা হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে ট্রাক প্রতি চাঁদা আদায় করছিল একটি চক্র। নিয়ম বহির্ভূত এমন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তাই দুইজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে সাজাপ্রাপ্তদের 'অন্যায়ভাবে' গ্রেপ্তারের অভিযোগ এনে পাথর-বালু মহালের ইজারাদারপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে থানার ওসি ও ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনায় পাটগ্রাম থানা ও আশপাশ এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। থানায় হামলা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, আসামি ছিনতাই এবং পুলিশকে আহত করার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ছামিয়া