ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

নগরকান্দা সড়কে গর্তে গাড়ি, ধূলায় দমবন্ধ, জনভোগান্তির চূড়ান্ত রূপ

আফতাব, নগরকান্দা,ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ৩০ জুন ২০২৫

নগরকান্দা সড়কে গর্তে গাড়ি, ধূলায় দমবন্ধ, জনভোগান্তির চূড়ান্ত রূপ

দৈনিক জনকণ্ঠ

বড়ো বড়ো গর্ত আর খানাখন্দে অনেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়ে বেহাল অবস্থা ফরিদপুরের নগরকান্দা-পুরাপাড়া বাজার পর্যন্ত সড়কটি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য জেলা শহর ফরিদপুর যাতায়াতের জন্য এটি একমাত্র সড়ক। 

 দীর্ঘদিন যাবত মেরামত না হয়ায় প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক এখন মরণফাদের রূপ  নিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার জনসাধারণ ও যাত্রীদের। বাড়ছে দুর্ঘটনা হতাহতের ঘটনা। গাড়ি চালকরাও বলছেন , সড়কে ভঙ্গুর অবস্থার প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কার  করার দাবি জানিয়েছেন চালক, যাত্রী ও সচেতন এলাকাবাসী। 

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী উপজেলা নগরকান্দা বাজার থেকে বনগ্রাম বাজার হয়ে পুড়াপাড়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের নগরকান্দা উপজেলা সদর থেকে বনগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কটির বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা।

বিশেষ করে নগরকান্দা বাজার থেকে দেলবাড়িয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক পরে আছে একেবারেই নাজুক অবস্থায়। সড়ক জুড়ে ছোট বড়ো অসংখ্য গর্ত। ধূলি বালিতে সব একাকার হয়ে আছে। উড়ন্ত ধূলি বালির কারণে এলাকায় সড়কের দুই পাশের জনগণের স্বাভাবিক বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এলাকার বায়ু দূষণ হচ্ছে।

একেকটি গর্ত ৬ ইঞ্চি থেকে এক দেড় ফুট পর্যন্ত। ইট-বালু শুড়কি পাথর বিটুমিন উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় নালা। সড়কের  দু'পাশে পথচারী চলাচলের জন্য প্রশস্ত ফুটপাতও নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত সময় নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এবং সড়কে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল করায় এমন বেহাল দশা। 

নগরকান্দা বাজারের রড- সিমেন্ট ব্যবসায়ী মো : জাফর আলী বলেন, সাম্প্রতিক নগরকান্দা বাজার থেকে দেলবাড়িয়া বাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পিস, খোয়া ও বালু উঠে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলতে পারছে না। অতিরিক্ত ঝাঁকির কারণে গাড়ির কল-কব্জা খুলে যাচ্ছে ।

নিয়মিত এই সড়কের যাত্রী পরিবহণ করেন ইজিবাইক চালক মো. রাসেল বলেন, "সড়কে নামলে মনে হয় আযাবের মধ্যে এসে পড়লাম। কখনো গর্তে পরে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ঝাকুনিতে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পরে। এটিকে এখন রোগী বানানোর সড়ক বলা যায়। "

রুবেল মিয়া নামের আরেকজন ইজিবাইক চালক  বলেন, "গর্তে গাড়ি পড়লেই এক সাইডে এমনভাবে বেকে যায় -মনে হয় যেন,উল্টে পরে গেলাম। রুগি থাকলে তাদের অবস্থা আরোও নাজুক হয়ে যাবে। "

এই সড়ক ধরেই সরকারি নগরকান্দা কলেজে যেতে হয় দফা গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল হাসানকে। ভাঙ্গা সড়কের জন্য তাকে গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। তাছাড়া দ্বিগুণ সময় লাগে জানিয়ে রকিবুল বলেন, ঝাঁকুনি ও কষ্ট যে কি পরিমাণ হয়, তা বলে বুঝানো কঠিন। 

নগরকান্দা, পুড়াপাড়া বাজার ও সড়কের পাশে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কয়েকমাস আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।

এসময় কোন যানবাহনের চাকা থেকে পাথর ছিটকে তাদের মাথায় লাগে। পরে শিশু দুটিকে হাসপাতালে নিতে হয়। পুড়াপাড়া বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাস্তা খারাপ হয়ায় কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে অনেক সময় লেগে যায়। এতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়।

তার কথা সত্যতা মেলে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের কথায়। তিনি বলেন, এই সড়কে যেতে এমনও হয়েছে গাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা নারীর বাচ্চা প্রসব হয়ে গেছে। অনেক সময় রোগী হাসপাতালে নিতে পাথেই মৃত্যু হয়েছ।

পুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবু ফকির বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বেহাল দশা কাটাতে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার পুড়াপাড়া বাজারে পাট ও পেঁয়াজের হাট বসার কারণে যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়।

নগরকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো: আব্দুল খালেক বলেন, এ রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। 

হ্যাপী

×