
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ কর্মকর্তাদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা।
২৮ জুন (শনিবার) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্মবিরতির কারণে দিনভর থেমে ছিল বন্দরের সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটানের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এখানে প্রতিদিন শস্য, পাথর, শিল্প কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আদান-প্রদান হয়। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় বন্দরে কার্যক্রম একপ্রকার সম্পূর্ণ থেমে গেছে।
রপ্তানি বন্ধ, আমদানি পণ্য আটকে
বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, শনিবার কোনো ধরনের রপ্তানি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ভূটান থেকে আমদানি হওয়া পাথরবাহী প্রায় ১৪৮টি ট্রাক বন্দরের ইয়ার্ডে পৌঁছালেও কাস্টমস ছাড়পত্র না থাকায় সেগুলো খালাস বা বাইরে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছাড়া আমদানি পণ্যের ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ট্রাকগুলো বন্দরে আটকে রয়েছে। এতে পণ্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।”
শ্রমিক ও চালকদের দুর্ভোগ
দিনভর বন্দরে দেখা গেছে ট্রাক চালক ও শ্রমিকদের অস্থিরতা। অনেকেই সকাল থেকে অপেক্ষা করলেও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। রোদে-গরমে বসে থেকে খাবার ও বিশ্রামের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।
একজন ট্রাকচালক জানান, “আমরা কয়েকদিনের যাত্রা শেষে এখানে পৌঁছেছি। পণ্য খালাস না হলে ফিরে যেতে পারছি না। গাড়ির ভাড়া, খাবার খরচ সব মিলিয়ে আমাদের লোকসান হচ্ছে।”
বহুপাক্ষিক বাণিজ্যে সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভূটানের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। বিশেষত ভারত ও ভূটানের মধ্যে পাথর, চিনি, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্যের পরিবহন হয় এই পথ দিয়ে। এই বন্দর বন্ধ থাকলে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পরিবহন সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, কর্মবিরতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে শুধু স্থানীয় অর্থনীতি নয়, আঞ্চলিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, কাস্টমস কর্মকর্তারা যদি আগামীকাল (রোববার, ২৯ জুন) থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন, তাহলে আটকে থাকা পণ্য খালাসের কাজ পুনরায় শুরু করা যাবে এবং ধাপে ধাপে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফেরানো সম্ভব হবে।
Jahan