
ছবিঃ জনকণ্ঠ
রাজতন্ত্রের দিন পেরিয়ে গেছে বহু আগেই, কিন্তু রাজশাহীর দুর্গাপুরে দেখা মিলল এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের, যিনি নিজেকে বলেন “রাজা”। তবে কোনো প্রাসাদ নেই, নেই কোনো রাজত্ব—আছে কেবল একটি স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার এক মানুষের নিরবিচারে চেষ্টা।
৭০ বছরের আব্দুল কাদের, পেশায় একজন নৈশপ্রহরী, কিন্তু দিনের আলো ফোটার পর তিনি হয়ে ওঠেন এক রাজা। প্রতিদিন সকালে রাজার পোশাক, রঙিন মুকুট, হাতে তলোয়ার আর ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তাকে দেখে পথচারীরা থমকে দাঁড়ায়, হাসে, কেউ আবার বিস্ময় নিয়ে দেখে—তবে গ্রামবাসীর কাছে তিনি শুধুই "আমাদের রাজা"।
চৌপুকুরিয়া গ্রামের এই বাসিন্দা জানালেন, শৈশবে সিনেমা আর যাত্রাপালায় রাজা-বাদশাহদের দেখে তার মনে বাসা বাঁধে রাজা হবার ইচ্ছা। সেই শখেই তিনি রাজকীয় পোশাক জোগাড় করেন, বানান সাজ-সরঞ্জাম, এমনকি তৈরি করেন সেনাপতি ও উজিরের চরিত্রও। যদিও তারা এখন প্রয়াত, আব্দুল কাদের একাই এখন বহন করে চলেছেন নিজের নির্মিত সেই রাজসভার ভার।
তার পরিবার—স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে—তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেন। গ্রামের লোকজনও তার এই ব্যতিক্রমী রূপটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার চোখে তিনি আনন্দের উৎস।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাজান আলী বলেন, “কাদের ভাই এই গ্রামের সবচেয়ে ভিন্নধর্মী ও সৌখিন মানুষ। তার রাজা সাজার বিষয়টা এখন আমাদের গ্রামেরই একটা ঐতিহ্য হয়ে গেছে।”
অপর একজন, হোসেন মাতব্বর বলেন, “যদিও কাদের ভাই পেশায় একজন পাহারাদার, কিন্তু তিনি মানুষের খোঁজখবর নেন, সাহায্য করেন, এক অর্থে তিনিই আমাদের গ্রামের ‘মানবিক রাজা’।"
দিন শেষে যখন সন্ধ্যার অন্ধকার নামে, তখন আব্দুল কাদের পরেন নিজের আসল পোশাক—নৈশপ্রহরীর ইউনিফর্ম। হাতে বাঁশি নিয়ে আবার শুরু হয় তার বাস্তব জীবনের সংগ্রাম। সামান্য আয় দিয়েই চলছে তার পরিবারের খরচ।
জানতে চাইলে আব্দুল কাদের বলেন, “আমি তো রাজা হতে পারিনি, তাই রাজা সাজাই। মানুষকে আনন্দ দিতে পারলে, আমার দিনটা সফল মনে হয়।”
তার জীবনের এই গল্প বলে দেয়—স্বপ্ন শুধু রাজপ্রাসাদে বসবাস করে না, কোনো কোনো স্বপ্ন একজোড়া সাধারণ জুতোর ভেতর দিয়েও হাঁটে, আর মানুষের হৃদয়ে রাজত্ব করে।
আলীম