ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার আহ্বান

এম এ মান্নান, তালা, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৬:০০, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:০৮, ১৪ জুন ২০২৫

শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার আহ্বান

ছবি: জনকণ্ঠ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের বৈষম্য দূরীকরণ নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস সবুরের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশফাকুর রহমান বিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ড. কোরবান আলী, তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার শিক্ষা ও বিশিষ্ট আলেম ড. খলিলুর রহমান মাদানী।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মাওলানা শাহজান মাদানী, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি মোঃ আব্দুর রহিম সরকার।

বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, আগরদাড়ি আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, শ্যামনগর আসনের সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলানা আজিজুর রহমান।

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল, গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা মুনতাসিম বিল্লাহ, মোহাম্মদ আলী, কামাল উদ্দীন, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মনোদ্বীপ সরকার, জয়ন্ত কুমার ঘোষ, আজিজুর রহমান, অধ্যাপক ওবায়দুল হক, অধ্যাপক আব্দুল ওয়ারেশ প্রমুখ।
সম্মেলনে পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সুফল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়া বর্তমান সময়ের দাবি।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে উপনিবেশিক মানসিকতা মুক্ত, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, পরমত সহিষ্ণু, সহাবস্থানে বিশ্বাসী, সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, সৃজনশীল ও যোগ্য নাগরিক তৈরির জন্য শিক্ষা সংস্কার করতে হবে।
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে সকল শিক্ষকের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষক সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট জোর দাবি জানানো হয়েছে।

দাবিসমূহ:
১. শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে।
২. জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতাসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রদান করতে হবে।
৩. বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদুল আজহার পূর্বেই ১০০% বোনাস দিতে হবে।
৪. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে বরখাস্তকৃত সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের বকেয়া পাওনাসহ স্বপদে বহাল করতে হবে; যারা অবসরে গেছেন তাদের ক্ষতিপূরণসহ সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
৫. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনভাতা নবম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে প্রদান করতে হবে।
৬. যশোর সরকারি এম এম কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে হবে।
৭. বাংলাদেশের সফল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনে যশোর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেহেতু যশোরকে সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা যশোরবাসীর প্রাণের দাবির বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. যশোর বাংলাদেশের একমাত্র ফুল উৎপাদনকারী জেলা এবং দেশের সিংহভাগ সবজি যশোরে উৎপাদিত হয়। এমতাবস্থায় ফুল ও সবজির বহুমুখী ব্যবহার ও উপযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণার প্রয়োজন। যশোরে কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর একটি কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।
৯. জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নয়, আট বছর পূর্ণ হলেই বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসার প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীতকরণ এবং সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং পদ অনুযায়ী বেতনভাতা দিতে হবে।
১০. বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে কল্যাণ ও অবসর তহবিলের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
১১. কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করে বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. শিক্ষাক্ষেত্রে সকল ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ ও নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
১৩. প্রতি গ্রামে সরকারিভাবে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা এবং সরকারিভাবে জমি বরাদ্দ দিতে হবে।

মুমু

×