ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদে গ্রামীণ উৎসবের ঢেউ: কুসুমপুরে চলছে ৮ দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলা

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:১০, ১৪ জুন ২০২৫

ঈদে গ্রামীণ উৎসবের ঢেউ: কুসুমপুরে চলছে ৮ দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলা

ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর গ্রামে বইছে উৎসবের হাওয়া। ঈদের পরদিন থেকে শুরু হওয়া ৮ দিনব্যাপী ‘ঈদ আনন্দ মেলা’ জমে উঠেছে যেন এক গ্রামীণ বিনোদনের হাট। ইছাপুরা ইউনিয়নের কুসুমপুর জাগরণী সংসদের আয়োজনে স্থানীয় খেলার মাঠজুড়ে বসেছে এই মেলা।

চলবে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত। ঈদের ছুটি, স্কুল-কলেজের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ এবং শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা মানুষের মিলনে মেলা এখন প্রাণচঞ্চল।শুক্রবার (১৩ জুন) মেলার ৬ষ্ঠ দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে সাজানো হয়েছে শতাধিক দোকান। কোথাও মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কোথাও কাঠের খেলনা কিংবা সোনালী আলপনার মত ঝিলমিলে শাড়ি। মুখরোচক খাবার থেকে শুরু করে প্রসাধনী, পোষাক, হস্তশিল্প—সবই মিলছে এক ছাদের নিচে।দিনে গরমের কারণে মেলায় মানুষের ঢল নামে রাতেও।

নাগরদোলায় চড়ে শিশুরা উল্লাসে মাতোয়ারা, আবার পাশেই ঘুরছে কার্ট রাইড আর ঝুলন্ত চেয়ার। সন্ধ্যা নামতেই মঞ্চে ভেসে আসে সুরের ঢেউ—স্থানীয় শিল্পীদের গান, নাচ ও নাটকে মুখর হয়ে উঠছে চারপাশ।মেলায় ঘুরতে আসা গৃহিণী নাজমা আক্তার বলেন, “ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসে মেলায় আসা আমাদের পরিবারের জন্য একটা বড় আনন্দের উৎস। সবাই মিলে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে।” ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার বলেন, “আমি খুব এক্সসাইটেড! মেলায় সস্তায় অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আসলে সারা বছর এই মেলার অপেক্ষায় থাকি। ব্যবসায়ী মানিক হোসেন জানান,প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পর এই মেলায় দোকান দিই। এবার সময় বেশি, বিক্রিও ভালো হচ্ছে।”অন্য এক দোকানদার মাসুদ রানা বললেন, “আগে বৈশাখী মেলায় যেতাম, এখন সেই রকম মেলা আর হয় না। তাই পরিবার নিয়ে এই ঈদ আনন্দ মেলায় আসি। এখান থেকে সাশ্রয়ে অনেক কিছু কিনতে পারি।”

কুসুমপুর জাগরণী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন-“আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখা, এবং নতুন প্রজন্মকে সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। প্রতিবছর এই মেলা শুধু কেনাকাটার নয়—এটা একটা সামাজিক সম্প্রীতির মঞ্চ হয়ে উঠেছে।”তিনি আরও বলেন,“মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন পুলিশ টহল ও নজরদারি থাকছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।”

মেলার পটভূমিতে শুধু হাট-বাজার নয়, ফুটে উঠেছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ মিলনমেলার ছবি। এই মেলাই যেন হয়ে উঠেছে পুরোনো বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হওয়ার উপলক্ষ। গ্রামের মাঠ আজ যেন এক রঙিন কারুশিল্প—যেখানে গান, আনন্দ আর মানুষের হাসি মিশে তৈরি হয়েছে এক ঈদ পরবর্তী মহাউৎসব।

 

রাজু

×