ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেলেপাড়ায় আনন্দ

৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১২ জুন ২০২৫

৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু

৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু

ইলিশসহ দেশের মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ ৫৮ দিন পর  আজ বৃহস্পতিবার থেকে ফের সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। এতে  ভোলার সামুদ্রগামী জেলেদের মধ্যে আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই ভোলার উপকূলের জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকার যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোলার দৌলতখান, চরফ্যাশন, মনপুরাসহ উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে জাল, বরফ, মালামাল আর ফিসিং বোট সাজিয়ে সাগরে যাচ্ছে।
দীর্ঘ দিন পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ভোলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে। পাশাপাশি জমজমাট হয়ে উঠেছে জেলার সমুদ্রগামী জেলেদের মাছ ঘাট । জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, সাগরে ৫৮ দিনের অভিযানে ১৪টি ট্রলিং বোটসহ মোট ১৮টি ট্রলার আটক করা হয়। এসব ট্রলার কে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উল্লেখ্য, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সাগরে ৫৮ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
নোয়াখালী ॥ নিষেধাজ্ঞা উঠতেই ট্রলার-জাল নিয়ে প্রস্তুত জেলেরা। দুই মাস প্রতীক্ষার পর আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ঘাটগুলো, কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়েছে নীরব থাকা জায়গাগুলো। বুধবার রাত ১২টা থেকে সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। মধ্যরাতের পরই সবাই মাছ ধরতে সাগরে নামছেন। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও পাশ্ববর্তী ভাসানচর, সূবর্ণচরের একাংশের প্রায় এক লাখ জেলে আবার ফিরছে সাগরে।
বুধবার সন্ধ্যায় হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নদী ও সাগরে নিয়মিত টহল দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু অসাধু জেলেকে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বছর প্রণোদনা হিসেবে হাতিয়ার ১২ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার সময় পরিবর্তন করে একই সময়ে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়।
হাতিয়ার সূর্যমুখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, হাতিয়ায় প্রায় ২০টি ঘাট রয়েছে যেখানে প্রায় ১০ হাজার মাছ ধরার নৌকা আছে। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০ জন কর্মী থাকেন। ফলে প্রায় ১ লাখ মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। মা ইলিশ রক্ষার জন্য ৫৮ দিন ধরে তারা কর্মহীন ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও তারা সাগরে নামবেন। দিনভর কয়েকটি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কেউ খালে নৌকার ইঞ্জিন পরীক্ষা করছেন, কেউ বড় ট্রলারে বরফ তুলছেন।
সূর্যমুখী ঘাটের কয়েকজন জেলে জানান, ৫৮ দিন ধরে তারা কোনো আয় না থাকায় বেকার ছিলেন। কেউ কেউ অস্থায়ী কাজ করেছেন, আবার কেউ নৌকা ও জাল মেরামতে সময় কাটিয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের পরিমাণ কম থাকায় অনেক নৌকা এখনও ঋণের বোঝায় জর্জরিত। নিষেধাজ্ঞা শেষে যদি ভালো মাছ না পাওয়া যায়, তবে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কাজীর বাজার ঘাটের জেলে নফেল উদ্দিন জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি চাল পেয়েছেন। কিন্তু পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এই চাল যথেষ্ট ছিল না। ফলে তাকে ধার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার নৌকায় তিনি ছাড়াও আরও ৯ জেলে আছেন। এদের মধ্যে প্রায় সকলেই সরকারি চাল পেয়েছেন।
হাতিয়া ট্রলার মালিক সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, হাতিয়ায় গভীর সমুদ্রগামী ২০০টিরও বেশি ট্রলার আছে। যেখানে প্রায় ৪ হাজার জেলে কাজ করেন। নিষেধাজ্ঞার ৫৮ দিনে মালিকদেরকেই এসব জেলে ও তাদের পরিবারের খরচ বহন করতে হয়েছে। যদিও এ বছর আর্থিক দিক থেকে মালিকদের অবস্থা কিছুটা ভালো। তাই তারা জেলেদের পাশে ছিলেন, যাতে নিষেধাজ্ঞা শেষে তারা সাগরে ফিরতে অনীহা না করেন।

×