
ছবি: সংগৃহীত
খানাখন্দে ভরা বাগেরহাট শহরের সড়কগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে ভৈরব নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের বাজার মেইন রোড, রাহাতের মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলা স্মৃতিসৌধ রোড, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন সড়ক, পুরাতন বাজার, সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সড়ক, নাগেরবাজার, বাসাবাটি কেবি, রহমানিয়া স্কুলের রাস্তা সহ বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এসব সড়ক খানাখন্দে ভরা এবং চলাচলের প্রায় অযোগ্য। তার ওপর জোয়ারের পানি উঠে গেলে দুর্ভোগ আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। বৃষ্টির দিনে রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ ড্রেনে পড়ে যাচ্ছেন, যাত্রীরাও পড়ছেন বিপাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালকেরাও অতিসাবধানে চলার পরেও ভিজে যাচ্ছেন। পৌরসভার বাসিন্দা কামরুজ্জামান মুকুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. ইরফান বাবার সাথে মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে রাস্তার পানিতে প্লাবিত অবস্থা দেখে বলে ওঠে, “ওরে বাবা, এদেখি যমুনার ঢেউ, কী অবস্থা!”
মুনিগঞ্জ এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী পারভেজ তরফদার বলেন, “বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থা, রাস্তাঘাট ভালো হবে না? এ ভোগান্তির পেছনে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা দায়ী।”
নোনাডাঙ্গা এলাকার রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন, যিনি ৪০ বছর ধরে এ শহরে রিকশা চালাচ্ছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গ্রামের রাস্তা এর চেয়ে ভালো। এখানে রিকশা চালালে যান (জীবন) থাকে না, রিকশাও শেষ। তার ওপর বৃষ্টি বা জোয়ার হলেই তো মরণ অবস্থা।”
অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, “বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ভৈরব নদীর জোয়ারের পানি শহরে ঢুকে পড়ে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করা হলেও বাস্তব পরিবর্তন আজও আসেনি।”
ব্যবসায়ী অমল সাহা জানান, “হালকা বৃষ্টি বা বেশি জোয়ার হলেই দোকানের মালপত্র ভিজে যায়, জল জমে ব্যবসা করা যায় না।”
বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, “শুকনা মৌসুমে সামান্য জোয়ার হলেই শহরে চলাচল করা যায় না। অনেকে বাড়ি থেকেই বের হতে পারেন না। দেশের আর কোনো জেলা শহরে এমন অবস্থা আছে বলে জানা নেই।” তিনি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার মাহাবুবুর রহমান টুটুল ও আযম মোল্লা বলেন, “অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে শহরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এর পাশাপাশি, শহর সংলগ্ন ভৈরব নদীর বেড়িবাঁধের গেটগুলো অকেজো থাকায় সামান্য বেশি জোয়ারেই শহর তলিয়ে যায়।”
বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, “শহরের ১০টি পয়েন্টে গেটের ক্যাপ লাগানোর কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ক্যাপ কেনা হয়েছে এবং পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তদারকিতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুতই শহরে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ হবে এবং নাগরিক ভোগান্তি কমবে।”
আসিফ