
ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকান মা ইভেট হেনরি রান্নাঘরে ছিলেন, পাশে ছিলেন তার চার সন্তান। বিশাল ৪ হাজার স্কয়ারফুটের বাড়ি হলেও সবাই ছিলেন ঠিক তার আশপাশেই। বিষয়টা তাকে যেমন অবাক করেছিল, তেমনি আনন্দও দিয়েছিল।
এ অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেন তার স্বামী গ্লেন হেনরির সঙ্গে করা পডকাস্টে—‘How Married Are You?’ যেখানে উঠে আসে এখনকার সময়ের ভাইরাল একটি ধারণা: ‘লিভিং রুম কিড বনাম বেডরুম কিড’।
কী এই ‘লিভিং রুম কিড’ আর ‘বেডরুম কিড’?
এটি কোনো বৈজ্ঞানিক শব্দ নয়, তবে বর্তমান সময়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ঘরোয়া আচরণ ব্যাখ্যা করতে এই টার্ম ব্যবহার করছেন।
লিভিং রুম কিড: যেসব শিশু বেশিরভাগ সময় পরিবারের সঙ্গে লিভিং রুম, ডাইনিং স্পেস বা রান্নাঘরে কাটায়।
বেডরুম কিড: যারা নিজের রুমে একা সময় কাটাতে পছন্দ করে—পড়াশোনা, গেম বা একান্ত সময়ের জন্য।
পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে সন্তানের আচরণ কী বলছে?
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. হুইটনি র্যাগলিন বিগনাল বলেন, যেসব সন্তান একসাথে সময় কাটাতে ভালোবাসে, তারা মূলত সেই পরিবেশে নিরাপদ বোধ করে। পরিবারে দ্বন্দ্ব বা চাপ থাকলে অনেকে একান্ত রুমে থাকতে পছন্দ করে। যেখানে সন্তানেরা নিরাপদ ও স্বস্তিতে থাকে, তারা সেখানে বেশি সময় কাটাতে চায়।
তবে বিষয়টি শুধু নিরাপত্তা নয়—ব্যক্তিত্ব, বয়স ও সংস্কৃতিও ভূমিকা রাখে। কিছু শিশু স্বভাবগতভাবেই অন্তর্মুখী বা পড়ুয়া হয়ে থাকে, ফলে তারা নিঃসঙ্গ সময় পছন্দ করে।
বয়স অনুযায়ী আচরণেও আসে পরিবর্তন
শিশুর বয়স যত বাড়ে, নিজের জায়গার প্রতি আগ্রহ, নিজেকে নিয়ে ভাবনা তত বাড়ে। বিশেষ করে টিনএজে শিশুরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা চায় এবং নিজ রুমে সময় কাটানো তাদের কাছে স্বাভাবিক আচরণ হয়ে দাঁড়ায়।
ড. থমাস প্রিওলো বলেন, ‘নিজের রুমের নিয়ন্ত্রণ থাকার মধ্য দিয়ে কিশোরেরা দায়িত্ববোধ ও স্বাধীনতা অনুভব করে। স্কুল সেশন চলাকালে সামাজিক ব্যস্ততার পর অনেকেই একা সময় কাটিয়ে নিজেকে রিচার্জ করে নিতে চায়।’
লিভিং রুম হোক বা বেডরুম—সন্তান যেন নিরাপদ অনুভব করে
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্তান কোথায় সময় কাটাচ্ছে, সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো—সে নিজেকে পরিবারের অংশ মনে করছে কিনা এবং তার মানসিক অবস্থা কেমন।
যদি কোনো ‘লিভিং রুম কিড’ হঠাৎ করেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তখন সেটা সতর্কবার্তা হতে পারে। কোনো সমস্যা, মানসিক চাপ বা পারিবারিক অসুবিধা থেকে এমন আচরণ হতে পারে।
‘বেডরুম প্যারেন্ট’ হওয়াও ঠিক আছে!
শুধু সন্তান নয়—মা-বাবারাও মাঝে মাঝে একা সময় কাটানোর প্রয়োজন অনুভব করেন। সবসময় একসাথে থাকাও চাপ তৈরি করতে পারে।
ড. বিগনাল বলেন, ‘সবারই মাঝে মাঝে বিরতি দরকার। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নিজের মানসিক শান্তির জন্যও একাকী সময় জরুরি।’
আপনি কীভাবে বুঝবেন সন্তানের আচরণ ঠিকঠাক?
- তার দৈনন্দিন আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন আসছে কি?
- সে পরিবারে নিজের মত প্রকাশে স্বস্তি পাচ্ছে কি?
- নিজের রুমে গেলে শুধু বিশ্রাম নিচ্ছে, নাকি সমস্যা থেকে পালাচ্ছে?
এই প্রশ্নগুলো বাবা-মা হিসেবে আপনাকে ভাবতে সাহায্য করবে।
সন্তান আপনার লিভিং রুমে থাকুক বা নিজের ঘরে—আসল বিষয় হলো সে যেন ভালো থাকে, নিরাপদ বোধ করে, এবং পরিবার তার জন্য এক ভালোবাসাময় জায়গা হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইউএস টুডে।
রাকিব