ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান আগ্রাসনকে সরাসরি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ত। এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কঠোর সমালোচনাই করেননি, বরং ইসরায়েলের নৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এহুদ ওলমার্ত বলেন, ‘গাজায় গত ১১ সপ্তাহ ধরে কোনো ধরনের খাদ্য বা ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা যদি যুদ্ধাপরাধ না হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধ কাকে বলে?’
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এহুদ ওলমার্ত হামাস নিধনের পক্ষে একসময় সরব ছিলেন। কিন্তু প্রায় ১৯ মাস ধরে চলা গাজা অভিযানের ভয়াবহতা দেখে এখন তার অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। তার মতে, এই সামরিক অভিযানের সময়সীমা সর্বোচ্চ এক বছর হওয়া উচিত ছিল। বর্তমানে যা চলছে, তাকে এক কথায় ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ বলা যায়।
ইসরায়েলের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওলমার্ত বলেন, ‘এই সরকার ইসরায়েলি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে বিপর্যস্ত করেছে। দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে জনগণের এখনই জেগে ওঠা উচিত। নেতানিয়াহুর সরকারকে বিদায় দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যে মাত্রায় বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, তা ইসরায়েলের জন্য কোনো দিক থেকেই সহায়ক নয়। এটি অমানবিক, অন্যায্য এবং সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়, যাতে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এই পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৩ হাজার ৯৭৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২২ হাজার ৯৬৬ জন। নিহত ও আহতদের অন্তত ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও বারবার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
এ অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্তের এই মন্তব্য শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ইসরায়েলের অবস্থানকে আরও চাপে ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব
