
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে সদ্য নির্মিত সড়ক মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দেবে গেছে। সড়ক নির্মাণে অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং দায়সারা কাজের অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনতা। তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে। বুড়াবুড়ি জামে মসজিদের সামনে একটি ইটবোঝাই ট্রাক পেছনের দিকে সরে (ব্যাক দিলে) ইট নামাতে গেলে হঠাৎ সড়কের একটি অংশ দেবে যায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে অংশে সড়কটি দেবে গেছে, সেখানে সাবগ্রেড ও সাববেইজের কাজ করার পর ভারী বৃষ্টিতে বালি-খোয়া ধসে পাশের পুকুরে চলে যায়। পরে সেই অংশ আবার বালি ও খোয়া দিয়ে ভরাট করা হলেও রোলার ব্যবহার না করে সরাসরি কার্পেটিং করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ—সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর, বালি ও ডাস্ট ছিল নিম্নমানের।
তড়িঘড়ি করে প্রাইম কোট ছাড়াই ডেন্স কার্পেটিং সম্পন্ন করে কাজ শেষ করা হয়। এতে করে সড়কের ভেতরে তৈরি হয় ফাঁকা জায়গা, যার ফলেই অল্প চাপেই দেবে যায় সড়ক।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বুড়াবুড়ি বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬৫ মিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৯ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘জারা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রকৃতপক্ষে একাধিক ঠিকাদার মিলে এই কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় মো. বুধারু বলেন, “ইট নামানোর জন্য একটি ট্রাক পিছনে গেলে সড়কটি দেবে যায়। এর আগেও একই স্থানে ফাঁকা তৈরি হয়েছিল। কার্পেটিংয়ের আগে ঠিকঠাকভাবে ভরাট ও রোলিং না করায় এমন হয়েছে।”
একই অভিযোগ করেন আমিরুল ইসলাম নামের আরেক বাসিন্দা। তিনি বলেন, “দেখলেই বোঝা যায়, কাজ কতটা নিম্নমানের হয়েছে। ভালোভাবে কাজ হলে কি ১৫ দিনের মাথায় রাস্তা দেবে যায়?”
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। এদিকে এলজিইডির অন্যান্য সড়ক প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিরনইহাট ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী থেকে সিপাইপাড়া হাজিপাড়া এবং তিরনইহাট বাজার থেকে শালবাহান পর্যন্ত সড়ক নির্মাণেও অনিয়ম ও দায়সারা কাজের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এলজিইডির সব কাজ তদারকি করেন জয়নাল আবেদিন নামের একজন সার্ভেয়ার। তিনি একাধারে সাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। এতে প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান বলেন, “ইউএনও স্যারসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। যেভাবে ট্রিটমেন্ট করলে সড়কটি টেকসই হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজের মান এবং দুর্বল জায়গা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়কটি দেবে গেলেও তা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে হয়েছে। তবে স্থানীয়দের মধ্যে আশঙ্কা একটি স্থানে দেবে যাওয়ার ঘটনা অন্যান্য অংশের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মিমিয়া