ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:০৯, ২৩ মে ২০২৫

বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “সংস্কৃতি হলো একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রধান উপাদান। এর মাধ্যমেই জাতিসত্তা ও জাতীয় পরিচয় বিকশিত হয়।” তিনি বলেন, “সংস্কৃতি একটি সমাজের আয়না। তবে সেই আয়নায় যদি সমাজের বাস্তবচিত্র না প্রতিফলিত হয়ে বিদেশি সংস্কৃতির ছায়া প্রতিফলিত হয়, তাহলে সমাজে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়।”

শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘আমরা কুঁড়ি’র ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ এস এম কামাল উদ্দিন। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, সৈয়দ আলমগীর, আইয়ুব ভূঁইয়া, নুরুল আজম পবন, মুশতাক আহমদ, ফেরদৌস আরা বন্যা প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতির রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। যুগে যুগে এই সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন দেশীয় সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলছে।” তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক তরুণ এখন দেশীয় চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্পীদের নামও জানে না, অথচ তারা বিদেশি সিনেমা ও গায়কদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল যেমন স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাস ইত্যাদি সিরিয়ালের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বিশেষ করে নারীদের মধ্যে দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চাকে অনেকটা গৃহবন্দি করে ফেলেছে। এমনকি সংসারের জরুরি মুহূর্তেও অনেকেই এসব সিরিয়াল ছাড়তে চায় না।”

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় সংগীতের জায়গায় হিন্দি ও ইংরেজি গান জায়গা করে নিচ্ছে। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বাংলা গান প্রায় অনুপস্থিত। আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিনের গান আর শোনা যায় না। অথচ ব্যান্ড সঙ্গীতের নামে যা হচ্ছে, তা মানুষের হৃদয় ছুঁতে ব্যর্থ।”

পোশাকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক হারিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম পশ্চিমা ফ্যাশনকে অনুসরণ করছে—ছেঁড়া প্যান্ট, অদ্ভুত চুলের স্টাইল, অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি—যা সংস্কৃতির বিকৃতি।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তির অবাধ বিস্তারের যুগে সবকিছু বন্ধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকাও চলবে না। আমাদের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ করতে হবে। ভালো দিক গ্রহণ করলেও, আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি মজবুত করতে হবে।”

শিক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শিক্ষার নিজস্ব একটি সংস্কৃতি রয়েছে। শিশুর মনন ও মেধা বিকাশে শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চাও জরুরি। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানেরা যদি ভালো খাবার, পোশাক ও স্কুল পায়, তবে পথশিশুদের কেন সেই অধিকার থাকবে না? সামাজিক বৈষম্য দূর না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপদে পড়বে। সবাইকে নিয়ে সামনে এগোতে হবে।”

আসিফ

×