ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসলামি ছাত্রী সংস্থার প্রতিবাদ কর্মসূচি এবার রাবিতে

লুবনা শারমিন , রাবি সংবাদদাতা , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ২১ মে ২০২৫

ইসলামি ছাত্রী সংস্থার প্রতিবাদ কর্মসূচি এবার রাবিতে

দৈনিক জনকণ্ঠ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থা। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তারা 'নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তাদের বাকি তিন দফা দাবি হলো "ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে অবজ্ঞা"  করে গঠিত বর্তমান নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করে ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাসী প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে । পতিতাবৃত্তি নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট নারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ধর্মীয় বিধানসমূহকে সংবিধানের আলোকে রক্ষা করে নারী উন্নয়নের একটি ভারসাম্য মূলক রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা 'নারী পুরুষ একে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোগী', 'সে নো টু এলজিবিটিকিউ অ্যাজেন্ডা', 'পতিতাবৃত্তিকে না বলুন', নারী পুরুষ বাইনারি এই শর্তে দেশ গড়ি', 'যৌন কর্মীদের স্বীকৃতি দান মায়ের জাতির অপমান', 'সম অধিকার নয়; চাই ন্যায্য অধিকার', 'আমার স্বামীর আমি রানি, রাজা আমার সে, পরম সুখের ঘর বাধলাম, তুমি ভাঙার কে?', 'সমতার নামে নারীত্বের বিকৃতি চলবে না' প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

নাম ও সেশন প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দাবি করে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমাদের ধর্ম, ইসলাম, জাতিসত্তা তথা নারীদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। যেখানে নারীদের মর্যাদা খর্ব করা হয়েছে। আমাদের মুসলিম পারিবারিক আইন রয়েছে, যেমন উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি, তালাক, বিয়ে—এখানে স্বাধীনতার নামে এমন কিছু প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছে, যা আমাদের পারিবারিক কলহ বা দ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

তারা বলছে যে তারা নারী পুরুষের মধ্যে অধিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা করেই নারী-পুরুষের মধ্যে একটা পার্থক্য রেখেছেন। যা অগ্রাহ্য করেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন একটা যুক্তি পেশ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, কিছু প্রস্তাবনায় তারা সমকামিতা এবং পতিতাবৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তবে 'এলজিবিটিকিউ' বা 'ট্রান্সজেন্ডার' মতবাদ আমাদের মানব সভ্যতার জন্য বিধ্বংসী একটা মতবাদ। এই মতবাদ আমাদের সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দিবে। এর পরে যদি এই 'ট্রান্সজেন্ডার' যদি একটি আইন হয়ে যায় তাহলে নারীরা নিরাপদ থাকতে পারবে না। কারণ সে নিজেকে নারী দাবি করলে মেয়েদের হলে একটা আসন দিতে হবে। এর ফলে ধর্ষণের হার অনেক বৃদ্ধি পাবে।

আবার একটা প্রস্তাবনায় পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি আমাদের নারীদের অপমান করা হয়েছে। কারণ পতিতাবৃত্তি কখনো পেশা হতে পারে না। কেউ সেচ্ছায় এই পেশায় আসে না তাকে একপ্রকার বাধ্য করে এই পেশায় আনা হয়। যদি পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে এই অপরাধের হার আরও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের উপর সরাসরি আঘাত হানা ধরনের প্রস্তাবনা সম্বলিত নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।

নাম ও সেশন প্রকাশে অনিচ্ছুক দপ্তর ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দাবি করে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ এ কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে বেশকিছু বিতর্কিত প্রস্তাবনা এসেছে যেগুলো পুরোপুরি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলো যদি একজন মুসলিম বিশ্বাস করে তাহলে সে আর মুসলিম থাকবে না। 

তিনি আরও বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে রাখা হয়নি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কমিশনে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি? তার জবাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি ধর্মকে রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে চান না। কিন্তু আমাদের অবস্থান হচ্ছে, ইসলাম শুধু ধর্ম বা ব্যক্তি গয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে রাষ্ট্র পর্যায়ে সবখানে ইসলামের বিধান আছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেগুলো মানতে চাই। তাই রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি রাষ্ট্র যেন আমাদের সেসব বিধান, বিশ্বাস অবমাননা না করে। আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধান কখনোই কোনো মুসলিম মেনে নেবে না।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্রসংস্থার বিভিন্ন নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিল।

হ্যাপী

×