
ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়িতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে জেএসএস এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সমর্থিত দুই ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে পৃথকভাবে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেএসএস সমর্থিত পিসিপি সংগঠনের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
এর আগে মহাজন পাড়া থেকে মিছিল বের করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে শেষ হয়। গণসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের শুরু হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনসংহতির সমিতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতনের শাসনব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে। শান্তি চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। আজও পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন-নিপীড়ন অব্যাহত আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, ভূমি দখলসহ নানা অপতৎপরতা চলমান রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর পরও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন,পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের দাবি করেন তিনি।”
এসময় সমাবেশে চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, “গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দেশবিদেশে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউপিডিএফ (প্রসীত) পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিশান চাকমা বলেন, “১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে রাঙামাটির লংগদুতে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেই গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একই বছরের ২০ মে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের রশীদ হলের ২০০২ নং রুমে পাহাড়ের লড়াকু সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বা পিসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে। জেল, জুলুম, হত্যা, মামলাসহ নানা নিপীড়ন-নির্যাতনকে সাথি করে ৩ যুগ পার করছে।”
এছাড়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃতিত্ব চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক মায়া চৌধুরী, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি কাকলী খীসা, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সরকারি চাকরিতে ৫শতাংশ কোটা পুনর্বহাল এবং স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। ।
এদিকে “জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে ছাত্র ও যুব সমাজে বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন” স্লোগানে পিসিপির ৩৬ বছর উপলক্ষ্যে ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে।
মঙ্গলবার (২০ মে)) সকালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি খাগড়াছড়ি মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে এ আয়োজন করে। এর আগে চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে মিলিত হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পতাকা উত্তোলন করে ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভায় অংশ নেন। শুরুতে সংগঠনের জন্য আত্মত্যাগীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)র কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপন চাকমার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক কলিন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিটন চাকমা, বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আলোকময় চাকমা।
এসময় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান অতিথি। তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও লড়াই সংগ্রামে ঐক্য জরুরি মন্তব্য করে অন্যথায় নিজের অস্তিত্ব রক্ষাসহ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাতে নিজেদের সচেষ্ট রাখাসহ নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান পরিবেশ গড়ে উঠেছে এবং শান্তির পথ ধরে পাহাড়কে এগিয়ে নিতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
মিরাজ খান