
ছবিঃ সংগৃহীত
কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় অসহায় নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন "নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার" নামের একটি হস্তশিল্প কারখানা। ২০২০ সাল থেকে কারখানাটিতে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এখানে অদক্ষ নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয় এবং তাদেরকে কাজের সুযোগ দেয়া হয়। নারী শ্রমিকেরা বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, গামছা ও থান কাপড় তৈরি করছেন। নারীদের তৈরি এসব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশের নামিদামি শোরুমে।
জানা গেছে, উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যা নিরাশির পাতার এলাকায় অবস্থিত নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টারের মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা জাকিয়া শাহারুদ খান রুনা। তিনি অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জাহাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ও এমিরাত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এর পাশাপাশি, গরিব, অসহায়, স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারী—যারা সংসার ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন না—তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কারখানাটিতে নারী শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে রয়েছে প্রশিক্ষণের সু-ব্যবস্থা।
রোববার (১৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামের হস্তশিল্প কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দক্ষ নারী শ্রমিকরা উইভিং, ড্রাইং, প্রিন্টিং, টেইলারিং ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, ন্যাপকিন, ডাস্টার, গামছা, থান কাপড়, কুশন কভার, থ্রিপিস এবং টেইলারিংয়ের মাধ্যমে মাস্ক, এপ্রোন, শার্ট, প্যান্ট, রানার, প্লেসম্যাট ও ব্যাগ তৈরি করছেন। এসব তৈরি পণ্যের উপর দক্ষ নারী শ্রমিকদের মাধ্যমে হাতের নকশা করা হচ্ছে। এভাবেই নারী শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম ও দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের পণ্য। নারী শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হস্তশিল্প কারখানা। কারখানায় উপার্জিত আয় দিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলছে নারী শ্রমিকদের সংসার।
কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক রোকছানা পারভীন (২৫), মোসলেমা বেগম (৩০) ও শিরিনা বেগম (৪০) সহ আরো অনেকেই বলেন, এখানে নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা। বাইরে গিয়ে আমাদের পক্ষে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়। এই হস্তশিল্প কারখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমরা সংসার চালাতে পারছি। তারা আরো জানান, প্রতি মাসে ৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে হস্তশিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় অভাবের সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। আমরা এখন সুন্দর জীবন-যাপন করছি।
হস্তশিল্প কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান জানান, এই কারখানায় হতদরিদ্র, অসহায় ও বিধবা নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, থ্রিপিস এবং টেইলারিংয়ের মাধ্যমে মাস্ক, এপ্রোন, শার্ট, প্যান্ট, রানার, প্লেসম্যাট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তৈরি পোশাক ও কাপড়ের উপর নানান নকশা করেন নারীরা। এসব পণ্য ঢাকার বনানী ও ধানমন্ডি এলাকার দুটি শোরুমে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও বিদেশে—লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও জার্মানিতে—রপ্তানি করা হয়।
এ বিষয়ে তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে হস্তশিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় আমরা গর্বিত। এই শিল্প কারখানার মাধ্যমে হতদরিদ্র, অসহায় ও বিধবা নারীরা সাবলম্বী হচ্ছেন। নারীরা নিজের পরিশ্রমে সংসার চালাচ্ছেন এবং সন্তানদের পড়ালেখার খরচ বহন করছেন। এরকম হস্তশিল্প কারখানার প্রসারতা যেন দিন দিন বৃদ্ধি পায়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মারিয়া