ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুষ্টি মুষ্টি চাল তুলে রাস্তা নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী!

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৮ মে ২০২৫

মুষ্টি মুষ্টি চাল তুলে রাস্তা নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী!

ছবি: সংগৃহীত

তিল থেকে তাল হয়। এতদিন এসব কথা শুনে এসেছি মুখে মুখে অথবা বইয়ের পাতায়। আবার এটাও শুনেছি। ছোট ছোট বালুকণা- বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তুলে মহাদেশ সাগর অতল। মুহূর্তে নিমেশকাল তুচ্ছ পরিমাণ, গড়ে যুগ যুগান্তর অনন্ত মহান। সাপ্তাহিক মুষ্ঠির চাল তুলে এবং তা বিক্রি করে নিজস্ব উদ্যোগে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী ১০০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ করে নজির স্থাপন করেছেন স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিত দুই গ্রামের বাসিন্দারা। 

উন্নয়নের জোয়ারে ভাষা এই বাংলাদেশে মুষ্টি মুষ্টি চাল তুলে রাস্তা নির্মাণ করে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গবরা ও দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল গ্রামের বাসিন্দারা। 

গ্রামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‍“তিন থানার লোক মিলে একটি সমাজ। যে কারণেই একেবারে লাস্ট প্রান্তে পড়ার কারণেই এখানে কোন উন্নয়ন হয় নাই। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এখানে উল্লেখযোগ্য কোন পরিমাণ উন্নয়ন হয় নাই। যে কারণেই আমরা বিভিন্ন লোক মারফত বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি ঘোরাঘুরি করেও কোন প্রকার উন্নয়ন আমরা পাই নাই।” 

স্থানীয় আরও এক যুবক বলেন, “আমরা কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে আমরা যুব সমাজ এবং গ্রামের মুরুব্বিয়ান সবাই মিলে আমরা নিজেরা আমাদের নিজের রাস্তার মেরামত করতে কিছুটা আমরা মেরামত করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যে আমাদের ইতিপূর্বে আমরা যুব সমাজরা সবাই মিলে আমরা নিজেরা মাথায় মাটি কেটে নিজেরা মাথায় করে রাস্তায় মাটি ফেলেছি এবং বর্তমানে আমাদের কিছু একটা ফান্ড আছে আমাদের গ্রামের মুষ্টির ফান্ড। সেখান থেকে টাকা নিয়ে আমাদের গ্রামের কিছু মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় আমরা রাস্তাঘাটের কিছু কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।” 

এ বিষয় আরও এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “অত্র এলাকার সকল মানুষ একত্রিত হয়ে তারা সাপ্তাহিকভাবে তারা মুষ্টির কিছু চাউল প্রত্যেক সপ্তাহে উত্তোলন করতো সেই উত্তোলনকৃত চাউল থেকে চাউলটাকে বিক্রি করে এই রাস্তার কাজ কিছু করা হয়েছে।” 

কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এই দুই গ্রামে। রাস্তাটি নীচু হওয়ায় প্রতিবছরে বন্যা কবলিত হয় তারা। বৃষ্টির দিনে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাইতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৈরী পরিবেশ মোকাবেলায় নিজেদের ভোগান্তির লাগবে সমাজের প্রবীণ ও যুবকদের উদ্যোগে এর উদ্যোগ নেয়া হয়। 

স্থানীয় এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, “কিছু করতাছি মুষ্টি চাল উঠিয়া, মুষ্টি চাল বিক্রি কইরা, কিছু মাটি ফালাইছি আর কিছু ফালিবার রইছে। আমরা যাইতে পারি না বর্ষা মাসে খুব অসুবিধা। তার জন্য সরকারি কর্মচারী যারা তাদের কাছে অনুরোধ রইল তারা জানি আমাদের রাস্তাটা করে দেয়।” 

কোন সরকারি কোন অনুদান পাই নাই। কাজেই নিজ উদ্যোগ এই রাস্তাটা যতটুক সম্ভব আমরা করছি। তো বাকিটা আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই সরকার যেন আমাগো বাকি কাজটা করতে পারে বলে দাবী জানান স্থানীয় এক বয়স্ক বাসিন্দা। 

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সাপ্তাহিক মুষ্টি চাল তুলে এবং তা বিক্রি করে গত দুই মাস যাবত ১০০০ মিটারের এই রাস্তাটির কাজ শুরু করেন। রাস্তাটির সম্পূর্ণ কাজ করতে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি শুভদৃষ্টি কামনা করেন দুই উপজেলার হাজারো মানুষ।

মিরাজ খান

×