
.
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের গাঢ় সবুজেঘেরা গ্রাম মাসকাট। এ গ্রামে চলতি বোরো মৌসুমে ‘পাকিস্তানি লং বাসমতি-১১২১’ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে এই প্রথম বিদেশি জাতের বাসমতি ধানের আবাদ। এ আবাদ করেছেন ওই গ্রামের আইন পড়ুয়া তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান সোহেল। উচ্চমূল্যের এ ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে তিনি মহাখুশি। প্রত্যাশা করছেন অধিক মুনাফার। তার সফলতার হাসি ছড়িয়ে দিতে চান আগ্রহী কৃষকদের মাঝে।
কামরুজ্জামান সোহেল নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা ক্যাম্পাসের এলএলবি শেষ বর্ষের ছাত্র।
তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘এই ধানের সঙ্গে হাইব্রিডের পার্থক্য হলো হাইব্রিড বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ মণ উৎপাদন হয়, তবে তার বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। পাকিস্তানি লং বাসমতিতে বিঘাপ্রতি উৎপাদন হবে ২৫ থেকে ৩০ মণ, কিন্তু এর বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।’ এই সুগন্ধি জাতের ধান চাষে সোহেলের সফলতায় এখানে গোটা এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আগামীতে এই জাতের ধান আবাদ করতে তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাগেরহাটে বিভিন্ন এলাকার কৃষক ছাড়াও খুলনা ও যশোর থেকে ইতোমধ্যে অনেক চাষি ও কৃষি বিভাগের লোকজন এ জাতের ধান সংগ্রহ করতে তার কাছে ছুটে আসছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমানে বাসমতি চাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, ফলে বাজারে এই চাল উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। স্থানীয় কৃষকরা এই ধানের আবাদ করলে লাভবান হবেন। বিদেশ থেকে এ চালের আমদানি হ্রাস পাবে। সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার। সরেজমিন মাসকাটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোহেলের বাড়ির সামনের এক একর জমিতে চাষ করা ধান কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় স্তূপ করে রেখেছেন। কামরুজ্জামান সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এই জমিতে পাকিস্তানি লং বাসমতি-১১২১ জাতের ধান রোপণ করেছি। একরপ্রতি প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি সফল হয়েছি। ভালো ফলন হয়েছে। এখন ধান ঘরে তোলার শেষ পর্যায়ে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের জমিতে ধানের আবাদ করছি। কিন্তু হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় সেই তুলনায় মুনাফা আসে না। তখন মাথায় এলো পোলাও-বিরানীতে বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয়। এসব সুগন্ধি চালের দাম কেজিপ্রতি চারশ’ টাকা পর্যন্ত। তাই পাকিস্তানের লং বাসমতি-১১২১ জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে আবাদ করি।’
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলেই পাকিস্তানি লং বাসমতি (সুগন্ধি চাল) ১১২১ ধানের আবাদ এই প্রথম, যা বাগেরহাটের ফকিরহাটেই আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, এবার বাগেরহাট জেলায় ৬২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ৭’শ ৭৬ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১০৪ শতাংশ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬৭৯০ মেট্রিক টন চাউল। বাম্পার ফলন হওয়ায় অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বাগেরহাট লবণাক্তপ্রবণ এলাকা। এ জাতটি কতটা লবণসহিষ্ণু, তা পরীক্ষা করার জন্য কৃষক সোহেলের আবাদকৃত ক্ষেতের মাটি কৃষি বিভাগ সংগ্রহ করেছে। লবণাক্ত ও দুর্যোগপ্ররণ এই এলাকায় এ ধানের আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে এ অঞ্চলের কৃষিতে সোনালি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।’ তিনি আইন পড়ুয়া তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান সোহেলকে অভিনন্দন জানান।
প্যানেল