ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৪, ৭ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

ছবি: জনকণ্ঠ

ভাঙা ছাদ থেকে প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের পলেস্তারা পড়ে গিয়ে রড বেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি এলেই ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। এ ছাড়া কক্ষের দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে ধরেছে ফাটল। বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় জং ধরা রড বেরিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারাও।


এমন ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা  ইউনিয়নের সুভারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা। বিদ্যালয়টির এমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় অভিভাবকেরা তাঁদের কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ছাদ এবং বিমগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় জং ধরা রড বেরিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারাও। বর্ষা শুরুর আগেই ভবনটি সম্পূর্ণ ড্যামেজ হয়ে গেছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেইচুছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা।


বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুভারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০০১ সালে ৬ কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে এ ভবনের ৪টি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও একটি কক্ষ বিদ্যালয়ের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের অনেক জায়গায় দেয়াল, পিলার ও বিমে ফাটল। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থীকে পাঁচজন শিক্ষক পড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।


আনিছুর রহমান নামের এক অভিভাবক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এই বিদ্যালয়ে আমার সন্তান পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকি। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের নতুন ভবন করা হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম দৈনিক জনকণ্ঠকে জানায়, ক্লাস চালাকালীন ছাদের পলেস্তারা খুলে আমাদের শরীরে পরে অনেক ভয় লাগে। আকাশে মেঘ দেখলেই বাবা-মা স্কুলে আসতে দিতে চান না।


বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক খন্দকার তানজিনা মমতাজ দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, আমার স্কুলে ২৬৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই ভবনটিতে শিক্ষকরা পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কারো কাম্য নয়। ভবন ভেঙে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন এর দায়কে নেবে।
তিনি আরও বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট আবেদন করলে তারা শুধু দীর্ঘদিন থেকে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। 


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান,  বিদ্যালয়ের ভবনটি আসলে ঝুঁকিপূর্ণ আমি জানি। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো। 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈদা পারভীন দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, নতুন একটি ভবনের বরাদ্দ এসেছে। সেই ভবনের জন্য দুইটি  বিদ্যালয় আবেদন করেছে। ইঞ্জিনিয়াররা সার্ভে করে প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নিবো।

শিহাব

×