
ছবি: জনকণ্ঠ
বিদ্যালয়ের সভাপতির মারমুখী আচরণ, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও অকথ্য ভাষার প্রয়োগের কারণে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তারাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৃতীয় দিন (বুধবার, ৭ মে) ক্লাসবর্জন অব্যাহত রেখেছেন। সেই সাথে শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জন করে সভাপতির পদত্যাগ দাবি করছেন।
শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, কাশিয়ানী উপজেলার তারাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি কাজী জহির আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের উপর বলপ্রয়োগ করেন। তার অনুগত না হলেই সাধারণ শিক্ষকদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক দেওলোয়ার আহমেদ ১৬.০৮.২০২৩ তারিখে অন্য একটি বিদ্যালয়ে যোগদান করায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। বিধি অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক গজেন্দ্র মোহন বিশ্বাস প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কাজী জহির আহমেদ এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই গজেন্দ্র মোহন বিশ্বাস প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক চাকরিচ্যুত বা অবসরে না গেলে তার স্থানে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যায় না। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যক্তি দায়িত্ব পাবেন। কোনো অজুহাতেই এ নিয়ম ভঙ্গ করা যাবে না।
কিন্তু সভাপতি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ালখুশিমতো চতুর্থ জনিয়র শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসিয়ে দেন। চলতি বছরেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই বিপ্লব কুমার বিশ্বাস নামে এক শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের সুযোগ করে দেন।
সভাপতির ভাই কাজী আরাফাত হোসেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মনি মোহনকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরবর্তীতে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির শালিসের মাধ্যমে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এতে অপমানবোধ করে মনি মোহন বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নেন।
কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, সভাপতি জহির আহমেদ সহকারী প্রধান শিক্ষক গজেন্দ্র মোহন বিশ্বাসকে ব্যবহার করে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে গালিগালাজ ও দুর্ব্যবহার শুরু করেন।
বিভিন্ন অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সভাপতি কাজী জহির আহমেদ শিক্ষক গাজী রাসেল এবং ফোরকান শরীফ টিটোকে চেয়ার তুলে মারতে যান, তখন অন্যান্য শিক্ষকরা বাধা দেন।
শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। আজ বুধবার তৃতীয় দিনেও ক্লাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফোরকান শরীফ টিটো জানান, সভাপতির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাস বর্জন চলবে।
এম.কে.