ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

রায়পুরে বই মেলায় উপচে পড়া ভিড়, পাঠককুলে বইছে হৃদয়ের জয়গান

প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ৭ মে ২০২৫

রায়পুরে বই মেলায় উপচে পড়া ভিড়, পাঠককুলে বইছে হৃদয়ের জয়গান

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

সকাল ১০টা থেকেই শহরের উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী পাঠক ও ক্রেতা। কেউ এসেছেন স্কুল ব্যাগে বই ভরে নিতে, কেউবা শুধুই বইয়ের ঘ্রাণ শুঁকে মনের খোরাক মেটাতে। রায়পুরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বই মেলায় পাঠকের এ ভিড় যেন প্রমাণ করছে- বইয়ের টান এখনো অটুট। 

সোমবার (৫ মে) থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় শুরু হয়েছে জমজমাট এ প্রাণ ছোঁয়া মেলা। চলবে ৮ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আজ বুধবার ৭ মে মেলা পরিদর্শন করে মেলার সংগঠক, পাঠক, দর্শনার্থী, শিক্ষার্থীদের সাথে কথায় উঠে আসে এ চিত্র। 

এই বই মেলা কোনো সাধারণ আয়োজন নয়। দেশব্যাপী আলোকিত মানুষ গড়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিশেষ উদ্যোগ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়  চলছে ভ্রাম্যমাণ এ বই মেলা। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে এ মেলা লক্ষ্মীপুরে জেলা শহরে ছয়দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রায়পুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শুরু হয় গত সোমবার। চার দিন ব্যাপী রায়পুরের চলার পর মেলা যাবে নোয়াখালীর কোম্পানি গঞ্জ উপজেলায়। মেলার সংগঠক জান্নাতুল নাঈম জানান, আজ বুধবার ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে। বৃহস্পতিবার চারটায় গান, নৃত্য, অভিনয় বিষয়ে প্রতিযোগিতার পর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।

দর্শনার্থী স্কুলছাত্রী প্রত্যাশা কর্মকার বলেন, “বইগুলো এত সুন্দর করে সাজানো! আমি ‘গর্ভধারিণী’ আর ‘মজার খেলা বিজ্ঞান’ নিয়ে যাচ্ছি।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাবা বলেন, “আমার সন্তান ফোন ঘাঁটায় না, বই পড়ে। এমন বই মেলা শহরে থাকলে মনটা শান্তি পায়।”

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনাসহ মেলায় পাওয়া যাচ্ছে দেশী বিদেশি প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত  ১০,০০০-এর বেশি বই। বিখ্যাত উপন্যাস, গল্পের বই, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনি, কবিতার বই, প্রবন্ধ, নাটক, জীবনীগ্রন্থ থেকে শুরু করে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, গবেষণা গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ, ভৌতিক উপন্যাস, রুপকথা, অনুবাদ গ্রন্থ, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, রান্না ও ব্যায়াম বিষয়ক, কম্পিউটার, ভাষা শেখার বইসহ সব ধরনের বই পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারছেন সবাই এ মেলা থেকে। রয়েছে বিশেষ ছাড়ও। 

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই ৩০% এবং অন্যান্য প্রকাশনীর বইয়ে ২৫% মূল্য ছাড়ে কিনতে পারছেন বই প্রেমিকরা। জনপ্রিয় বইয়ের মধ্যে ছিল  ছিল হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, এবং রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি। শিশুদের জন্য ছিল আলাদা কর্নার, যেখানে “টুনটুনির গল্প” ও “বিজ্ঞানী আবিষ্কার” বই হাতে নিয়ে উচ্ছ্বাস করছিল ছোট্ট পাঠকরা।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বই মেলার ইউনিট ইনচার্জ অমিত চক্রবর্তী বলেন, “আমরা চাই, শহর ছাড়াও গ্রামের প্রত্যেক ছেলেমেয়ের হাতে বই পৌঁছে যাক। এই ভ্রাম্যমাণ বই মেলা-ই তার প্রমাণ।”

স্থানীয় আর্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল সাংবাদিক শংকর মজুমদার মন্তব্য করেন, “বই পড়ার এই সুযোগ গড়ে তুলছে সংস্কৃতিমনস্ক এক সমাজ। বই পড়ার এই আন্দোলনে বিশেষ গতি এনেছিলেন রায়পুরের সাবেক ইউএনও অঞ্জন দাশ।”

বইয়ের সুরভিতে মাতাল দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে। পাঠকরা ফিরে যান বই হাতে, মন ভরে। এই মেলা শুধু বই কেনার নয়-এ যেন হৃদয়ে জ্ঞান ও কল্পনার বিজয়।

মিরাজ খান

×