ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১১ মার্চ ২০২৫

ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

পাঁচ দফা দাবিতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ও টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ চিকিৎসকদের বিক্ষোভ

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে সিনিয়র চিকিৎসকরাও একাত্মতা প্রকাশ করায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ পুরো শহরের সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের এ কর্মবিরতির ফলে মঙ্গলবার দিনভর দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

রামেক হাসপাতালে বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড এবং বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। রোগীরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক আসেননি। অনেক রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও পরামর্শ দেওয়ার কেউ নেই। নার্সদের কাছে গেলে তারা বলছেন, তাদের কিছু করার নেই।
রামেকসংলগ্ন নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা চিকিৎসকের সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন, কিন্তু কোথাও চিকিৎসক বসেননি। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মী হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা করছেন ‘আজ কোনো ডাক্তার বসবেন না, হটলাইনে ফোন করে পরে আসবেন।’ এতে হতাশ রোগী ও স্বজনরা। 
দুপুরের দিকে মেহেরপুর থেকে রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা কিডনি রোগী আনোয়ারা খাতুনের ছেলে আবদুল আলিম বলেন, এক হাজার ৬০০ টাকা মাইক্রো ভাড়া দিয়ে এসেছি, এসে শুনছি ডাক্তার বসবেন না। এখন ফিরেও যেতে পারছি না।
চুয়াডাঙ্গা থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত মেয়ে তানিয়াকে নিয়ে আসা হাসিনা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসে পৌঁছেছি দুপুরে। এখন এসে শুনি ডাক্তার বসবেন না। এটা আগেই জানালে অন্তত আসতাম না।
একই অবস্থা গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ রাজশাহী নগরের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও। গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, সকালে আমরা রোগীদের সিরিয়াল নিয়েছিলাম, কিন্তু চিকিৎসকরা না বসায় এখন রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকদের পাঁচদফা দাবির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই কর্মবিরতির ফলে রাজশাহীর চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, আর রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, দফায় দফায় আল্টিমেটাম দিয়েও দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। সিনিয়র চিকিৎসকরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চলবে। রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, শুধু জরুরি বিভাগ ও নতুন ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নির্ভর করছে হাইকোর্টের আসন্ন রায়ের ওপর।
সিলেট
স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, ৫ দফা দাবিতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনকারীরা জানান, কর্মসূচির আওতায় ‘একাডেমিক শাটডাউন’ বহাল থাকবে এবং শিক্ষার্থী-ফ্যাকাল্টি মেম্বার, একাডেমিক, প্রশাসনিক হেডসহ (প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর) বিক্ষোভে অংশ নেবেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনের বিশেষ ঘোষণায় ইন্টার্ন, মিড লেভেল চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের সব চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন যাবেন এবং আউটডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে। এ ছাড়াও সব চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে এসব আহ্বান জানিয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকবৃন্দ।

পরবর্তী ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বলবৎ থাকবে বলে একটি নোটিসও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া দলমত নির্বিশেষে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক সমাজ একযোগে ‘ঢাকা চলো’ মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।  ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র দেব জানিয়েছেন, সকাল থেকে হাসপাতালে শাটডাউন চলছে। ফলে আউটডোরসহ অনেক বিভাগই বন্ধ রয়েছে।

জরুরি বিভাগ, আইসিইউসহ কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগসমূহে সেবা চালু রয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। 
টাঙ্গাইল
নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, ম্যাটস শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে শার্টডাউন কর্মসূচি পালন করেছে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ চত্বর থেকে হাসপাতালের সামনে এ বিক্ষোভ করে তারা।

আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন মেডিক্যালে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক পদবি ব্যবহার নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে এলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। কিন্তু এসএসসি পাস করে ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক সেজে বসে রয়েছে। এসব  নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে।
পটুয়াখালী 
নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী থেকে জানান, ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা নতুন করে গঠনের লক্ষ্যে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকবৃন্দ। মঙ্গলবার সকাল থেকে সকল ক্লাস, পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন, কর্মবিরতি ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ রেখে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী চিকিৎসকবৃন্দ। 
ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারক লিপি প্রদান করেন তারা। পরে মিছিল পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে এসে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক এবং চিকিৎসকবৃন্দ এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মনিরুজ্জামান ও উপাধ্যক্ষ ডা. এফ এম আতিকুর রহমান প্রমুখ।

×