আকস্মিক বন্যায় অনেক জেলায় সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ ডুবে গেছে
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অনেক জেলায় সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ ডুবে গেছে। এতে সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানির তীব্র ¯্রােতের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রেলপথের নিচের মাটি সরে গিয়ে লাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হওয়ায় রেলব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম. ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ ২৬ টি রুটের ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে। এদিকে কুমিল্লা-চট্টগ্রামসহ ৫টি রুটে আংশিক ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।
বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রবল বর্ষণ ও অতিবৃষ্টির কারণে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সেকশনে রেললাইনের নিচের মাটি সরে গিয়ে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অতিবৃষ্টির কারণে ফাজিলপুর-কালিদহ সেকশনের নিচ থেকে মাটি, পাথরসহ স্লিপার সরে গিয়ে রেললাইন বেঁকে যায় এবং চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারী-কক্সবাজার সেকশনেও একইভাবে লাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে লাইন বেঁকে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করার জন্য ডিইএন-১ (চট্টগ্রাম) অনুরোধ জানান।
এছাড়া, শায়েস্তাগঞ্জ-লস্করপুর সেকশনের কিলোমিটার ২৬০/৯ থেকে ২৬১/১ পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলসেতু নং ৯৮ এর গার্ডার সমান পানি হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার জন্য এসএসএই (ওয়ে) (শায়েস্তাগঞ্জ) অনুরোধ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ২৬ টি রুটে ট্রেন বাতিল ও ৫ টি রুটে ট্রেন চলাচল আংশিক বাতিল করা হয়েছে।
বাতিলকৃত ট্রেনের রুটগুলো হলো- ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের ৭০১, ৭০২, ৭০৩, ৭২১, ৭২২, ৭৪১, ৭৪২, ৭৮৭, ৮০২ নম্বর ট্রেন, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে ৭১৭, ৭১৮, ৭৩৯, ৭৪০, ৭৭৩ নম্বর ট্রেন, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের ৭১৯, ৭২৩ ও ৭২৪ নম্বর ট্রেন, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের ৭২৯ ও ৭৩০ নম্বর ট্রেন, চট্টগ্রাম-জামালপুর-চট্টগ্রাম রুটে ৭৮৫ ও ৭৮৬ নম্বর ট্রেন, কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ৮১৩ ও ৮১৪ নম্বর ট্রেন, ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটের ৮১৬ ও ৮১৫ নম্বর ট্রেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের স্পেশাল ট্রেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম ১ ও ২ নম্বর ট্রেন, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের ৯ ও ১০ নম্বর ট্রেন এবং চট্টগ্রাম-ভূয়াপুর রুটের ৩৭ নম্বর ট্রেন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রাম, গুণবতী-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-আখাউড়া রুটের ট্রেন চলাচল আংশিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি চলাচল করছে। একই অবস্থা হয়েছে সিলেটের একটি রেলসেতুতেও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনেও পাহাড়ধস হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রেন চালানো খুবই বিপজ্জনক। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রেলের সম্পদ রক্ষায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। কিন্তু বন্যার কারণে ট্রেনগুলো গন্তব্যে যেতে পারেনি।
পুনরায় সেগুলোকে ফিরতে হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, জামালপুর, সিলেট ও চাঁদপুরে প্রতিদিন ১১টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া কক্সবাজার, নাজিরহাট, চাঁদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে নিয়মিত।
নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে রেলসেতু ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা করেছে রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী ৬টি ট্রেনই বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে কর্মরত মাস্টার গৌর প্রসাদ দাশ পলাশ বলেন, পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। ভারি বর্ষণের প্রভাবে হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে; পানির স্রোত সিলেট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ‘খোয়াই সেতু’ ছুঁই ছুঁই। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে রেল যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মহাসড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ফলে চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তবে ঢাকামুখী লেনে কিছু যান চলাচল করছে বলে স্থানীয়রা জানান।
আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লায় অব্যাহত প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্রমেই ফুঁসে উঠে গোমতী, কাকড়ী, ডাকাতিয়াসহ অন্যান্য নদীর পানি। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গোমতি নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে উত্তরদিকে হাড়িসদ্দার পর্যন্ত অন্তত ৫-৬ কিলোমিটার এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। এতে মহাসড়কে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।
ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম অভিমুখে মহাসড়কে বৃহস্পতিবার দিনভর যানজট লেগেছিল। অব্যাহত ভারি বর্ষণে কুমিল্লা শহরেও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিএসআরএম গেট থেকে মামা ফকির আস্তানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে অনেককে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
‘উত্তরা পরিবহনে’র বাসচালক সাহাব উদ্দিন জানান, বিএসআরএম গেটের পর থেকে সড়কে হাঁটুপানি। ফলে গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল সরকার বলেন, মহাসড়কে পানির কারণে যান চলাচল বন্ধ। পানি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক মহাসড়ক।