ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

কুকি-চিন আতঙ্ক কাটছেই না!

বান্দরবানে ঈদুল আজহার ছুটিতেও নেই আশানুরূপ পর্যটক 

মোহাম্মদ আবদুর রহিম, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ১৯ জুন ২০২৪

বান্দরবানে ঈদুল আজহার ছুটিতেও নেই আশানুরূপ পর্যটক 

নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র।

পবিত্র ঈদুল আজহার টানা পাঁচ দিনের ছুটিতেও বান্দরবানে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সস্ত্রাসী তৎপরতা ও রুমা থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় বান্দরবান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দেমি-বিদেশি পর্যটকরা। এতে জেলার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, যানবাহনের মালিকসহ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল সকল সেক্টরের ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে।
 
সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য বান্দরবান প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি হওয়া সত্তে্বও পর্যটকেরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে সবাই ধারণা করছেন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ও পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আভিযানিক পরিস্থিতিকে। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে নিরাপত্তা বিপর্যয়ের শঙ্কাও রয়েছে। যদিও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। 

বান্দরবান শহরের পাশ্ববর্তী পর্যটন স্পষ্ট নীলাচল, মেঘলা ও শৈলপ্রপাতসহ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বেশকিছু পর্যটকের পদচারণা রয়েছে। তাও আবার বান্দরবান জেলার পাশ্ববর্তী চট্রগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলা থেকে আগত ঈদ উপলক্ষে কিছু সংখ্যক দর্শনার্থী। যা সকালে এসে বিকেলে ফিরে যাওয়ার মত করে ঘুরতে এসেছেন। 

অপরদিকে, জেলা ও উপজেলা শহরে শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্রে ছয় হাজারের বেশি পর্যটককে আবাসন সেবা প্রদান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা। তবে কেএনএফের সন্ত্রাসী তৎপরতার আগে রুমার বগালেক, কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় রোয়াংছড়ির লিরাগঁই, রৌনিনপাড়া ও থানচির নাফাকুম, তিন্দু, রেমাক্রিসহ বিভিন্ন জায়গায় রিসোর্ট ও বাসা বাড়িতে অতিথি হয়ে শত শত পর্যটক থাকলেও বর্তমানে কেএনএফের আতঙ্কে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস জানান, তাদের ৮৫ রুমের মধ্যে কিছু রুম ভাড়া হলেও বেশিরভাগ রুম ভাড়া হয়নি। বছরের দুই ঈদের পর্যটকদের চাপের কারণে রুম দেওয়া কষ্ট হয়ে যেত। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। পাহাড়ের অবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকরা বান্দরবানে আসতে ভয় পাচ্ছে।
 
চট্রগ্রাম থেকে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা রুমার বগালেক, কেওক্রাডং, থানচির নাফাকুম, তিন্দু যেতে আগ্রহী, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এমনিতে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো কঠিন। আবার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ আছে তাই চট্রগ্রাম ফিরে যেতে হচ্ছে। 

বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোটেল আরণ্যের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, গত রমজানের ঈদের চেয়েও এবারের অবস্থা আরও খারাপ। ভাবছিলাম এবারের ঈদে কিছু পর্যটক আসবে তাও হলো না। এক কথায় বলতে গেলে পর্যটন ব্যবসা ধ্বংসের পথে। এই অবস্থায় হোটেল মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, যানবাহনে নিয়োজিত লোকজন, কমিটি পর্যটনে নির্ভরশীল পরিবারসহ প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ আয় হারিয়েছেন। 

গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অপহরণ, অস্ত্র লুটের ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময় বান্দরবানে পর্যটকেরা ছিনতাই ও মারধরের ঘটনার শিকার হয়েছেন। 

বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আসিফ রায়হান দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, জেলার পর্যটন স্পট গুলোতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ঈদের আগে থেকেই সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে পর্যটক একটু কম। আগামীতে পর্যটক আগমনের সংখ্যা উন্নতি হতে পারে। 


 

 এসআর

×