সাপের উপদ্রব
সাপের ভয়ে দিন কাটছে শরীয়তপুরে। বেড়েছে বিভিন্ন জাতের সাপের উপদ্রব। এই আধুনিক সময়ে এসেও সাপে কাটা ঘটনা ঘটলে এখনও ওঝার উপর ভরসা রাখে তারা।
নদী বেষ্টির এলাকা শরীয়তপুরে প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুমে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। বিষাক্ত সাপের কামড়ে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম থাকলেও প্রচার প্রসার না থাকায় সেবা নিতে জেলার বাইরে চলে যাচ্ছেন অনেকেই।
আবার সুবিধা না পেয়ে ওঝার উপর ভরসা করে সময়ের কালক্ষেপণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে সেখানে। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে আসলেই মিলছে চিকিৎসা; পর্যাপ্ত রয়েছে অ্যান্টিভেনমও।
কিছুদিন আগে শরীয়তপুরের সখিপুরে মুন্সিকান্দি এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মাদবর নিজ কৃষি জমিতে কাজ করার সময় বিষাক্ত সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। প্রথমে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষতস্থানে মুখের লালা লাগিয়ে পুনরায় কাজ করতে থাকেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর ঝিমুনি পেলে দৌড়ে আসেন স্থানীয় ওঝার কাছে। পরবর্তীতে তার পরিবার বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথেই জানতে পারেন সেখানে অ্যান্টিভেনম নেই। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে অ্যান্টিভেনমের ১০টি ডোজ প্রয়োগ করা হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
একইভাবে ১৮ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় একই উপজেলার আল্লাদী বেগম ও ইমামুল বেপারীর। তিন মাসে একই এলাকায় সাপের কামড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হচ্ছে সাপ ও সাপের ডিম। এ নিয়ে আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।
বেসরকারি এক জরিপে জানা গেছে, গত দুই মাসে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন আর এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে গেছেন ওঝার কাছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতু আক্তার বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৩৭ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে বিষধর সাপের কামড়ের সিমটম থাকায় অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে মাত্র ৬ জনকে। ৫ জন সুস্থ হলেও দেরিতে আসায় একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন সাপে কাটা রোগী আসলেও অ্যান্টিভেনম লাগেনি।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগী এসেছেন ৮ জন। যার মধ্যে ১ জনকে অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে। গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও কোন সাপে কাটা রোগী যায়নি। ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন রোগী আসলেও এদের কাউকে এন্টিভেনম দেওয়া লাগেনি। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন রোগী এসেছেন। তাদের কাউকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া লাগেনি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে না এসে যাচ্ছেন ওঝার কাছে।
তিনি বলেন, এ রকম অপচিকিৎসা না দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কাছে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম। দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে প্রাণে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শিলা