ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

সার্বিক অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ

মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৪ মে ২০২৪

মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ

পুরোদমে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে কমলাপুর মেট্রোস্টেশনের ৩০টি কলামের মধ্যে ২৪টির কাজ শেষ হয়েছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে এই মেট্রোস্টেশনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই কাজ শুরু হবে। এছাড়া মতিঝিলের ৬২৮ নম্বর পিয়ার থেকে কমলাপুরমুখী ৬২৯ নম্বর পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই অংশের প্রায় ৩৭ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তাই মেট্রোরেলের কাজের সুবিধার্থে আগামী ছয় মাস কমলাপুর-টিটিপাড়া সড়কের দুটি লেনের একটি লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর মতিঝিল-কমলাপুর অংশে গত ২৩ মার্চ থেকে ভায়াডাক্ট সংযোজন শুরু হয়েছে। কমলাপুর মেট্রোস্টেশনের কাজও অনেকদূর এগিয়েছে। এই অংশের সার্বিক অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ।

প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজের সুবিধার্থে সড়কের একপাশ বন্ধ রেখে অন্যপাশ দিয়ে গাড়ি দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পুরোপুরি কাজ শেষ করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, দেশের প্রথম মেট্রোরেল ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬। এটি নির্মাণ করা হয়েছে উড়াল (এলিভেটেড) পথে। রাজধানীর উত্তরা-দিয়াবাড়ী-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার (কিমি)।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বরে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিমি অংশ চালু করা হয়। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশটি গত বছর ৪ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১৬ কিমি উড়ালপথে মেট্রোরেল চলাচল করছে। প্রথম মেট্রোরেলের স্টেশন ১৭টি। ১৬টি মেট্রোস্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।

কমলাপুর পর্যন্ত বাকি এক দশমিক ১৬ কিমি অংশের নির্মাণ চলছে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান। এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, কমলাপুর মেট্রোস্টেশনের কাজ চলছে পুরোদমে।

ইতোমধ্যে স্টেশনের ৩০ কলামের (পিলার) মধ্যে ২৪টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ছয়টির কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে। জুনের প্রথম সপ্তাহে চারতলা মেট্রোস্টেশনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই কাজ শুরু হবে।
তাই কমলাপুরে মেট্রোরেল স্টেশন নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে কমলাপুর-টিটিপাড়া সড়কের দুটি লেনের একটি লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

যে লেনটি চলমান থাকবে সেটা দিয়ে শুধু টিটিপাড়া থেকে কমলাপুর যাওয়া যাবে। কমলাপুর থেকে টিটিপাড়াগামী যানবাহনগুলোকে মতিঝিল হয়ে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে হবে। স্টেশনের প্রথম তলার নির্মাণ কাজের সময় এই লেনটি দিয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই একটি লেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম তলার নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় ছয় মাস লাগবে। এজন্য সড়কের লেনটি ছয় মাস বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে কমলাপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য বেশকিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙতে হয়েছে। মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের সড়কে পাইলিং করে নির্মাণ করা হয়েছে মেট্রোরেল পিয়ার। এর মধ্যে মতিঝিল মেট্রোস্টেশনের সামনের অংশে ৬২৮ ও ৬২৯ নম্বর পিয়ার থেকে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

মতিঝিলের শাপলা চত্বর হয়ে দক্ষিণ কমলাপুর দিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এক দশমিক ১৬ কিমি অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬। কমলাপুর অংশে মেট্রোরেল লাইন সম্প্রসারণের জন্য শতাধিক বাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন নামে দক্ষিণ কমলাপুরের এক বাসিন্দা জনকণ্ঠকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে তার বাড়ির এক শতাংশের কিছু কম অংশ ভাঙতে হয়েছে। এজন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। মেট্রোরেলের কাজের জন্য দক্ষিণ কমলাপুর এলাকায় প্রায় ২২টির মতো বহুতল ভবন ও ৪০টির বেশি একতলা বাড়ি ও দোকান ভাঙা পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের কমলাপুর অংশের কাজের জন্য ৩৭ ধরনের মাটির পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ১৭৭ পাইলিং, ৬১টি পাইল ক্যাপ, ৩০টি স্টেশন কলাম, ৩৯টি পিয়ার বা ভায়াডাক্ট কলাম, ১৭টি পিয়ার হেড, ১২টি পোর্টাল বিম, ২৯৮টি প্রিকাস্ট সেগমেন্ট, ২৮টি স্প্যান, ৪১০৭ বর্গমিটার কনকোর্স স্ল্যাব, ২৫৪০ বর্গমিটার রেলওয়ে লেভেল স্ল্যাব, ২৭২৩ বর্গমিটার প্ল্যাটফর্ম স্ল্যাব ও ১৬০০ টন ইস্পাত স্ট্রাকচার ব্যবহার করা হবে। ১৭৭ পাইলিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।

৬১টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ৪১টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৩৯টি পিয়ারের মধ্যে ২০টির কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর উত্তরা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ২৯৮টি প্রিকাস্ট সেগমেন্টের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গত ২১ মার্চ মতিঝিলের ৬২৮ নম্বর পিয়ার থেকে কমলাপুরমুখী ৬২৯ নম্বর পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬’র  উত্তরা উত্তর হতে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের বাস্তব গড় অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এই অংশের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

গত বছরের ৪ নভেম্বর এই অংশটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এছাড়া মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি মেট্রোরেলের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহসহ এমআরটি লাইন-৬’র সমন্বিতভাবে ৯৪ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে বলে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান।

×