ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চা বিক্রেতা থেকে বেলায়েতের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার বিস্ময়কর গল্প

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৬ এপ্রিল ২০২৪

চা বিক্রেতা থেকে বেলায়েতের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার বিস্ময়কর গল্প

বেলায়েতের শিক্ষক হওয়ার বিস্ময়কর গল্প

শরীয়তপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে অভাবের কারণে ছেলে বেলায়েত হোসেন ইমরোজকে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করতে রাজি হননি চা দোকানি বাবা শামছুল তালুকদার। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকার পরও অভাবের কারণে বাবার দোকানে পুরোদস্তুর চা বিক্রি শুরু করেন বেলায়েত। 

পরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় গ্রামের শিক্ষকসহ স্বজনদের অনুরোধে ছেলেকে পড়াতে রাজি হন বাবা।

বেলায়েত হোসেনের জন্ম দরিদ্র কৃষক পরিবারে। শৈশব, কৈশোরে পরিবারের অর্থনৈতিক দুর্দশা বিলাসিতা থেকে তাঁকে অনেকটাই দূরে রেখেছে। গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতায় বাবার সঙ্গে তিনিও কাজে সহায়তা করতেন। তবুও পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছেন। 

বেলায়েতের এমন অর্জনে তাঁর মা-বাবা, স্বজন, পাড়াপড়শিরা যেমন খুশি, তেমনি তিনি নিজেও আনন্দিত। বেলায়েত হোসেনের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামে। চলতি মাসে তাঁর পোস্টিং পাওয়ার কথা রয়েছে।


বেলায়েত বলেন, ‘আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। পরিবার নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমার মা-বাবা আমাকে উন্নত জীবন দিতে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়িয়েছেন। পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার সাফল্য দেখে তাঁরা অনেক খুশি হয়েছেন। মা-বাবার সেবা করেই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’ শরীয়তপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। 

স্নাতক শেষে ২০১৯ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। বেলায়েত আরও জানান, একাডেমিক পাঠ চুকিয়ে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ২০২২ সালে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রথম হন। পরে সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর ৪১তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিভাগে সারা দেশে দ্বিতীয় হন তিনি।

বেলায়েত হোসেনের বাবা শামছুল তালুকদার বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। সন্তানদের পড়ালেখা না করাতে পারলে উন্নত জীবন পাবে না। এটি ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে চার সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারছি। আমরা অনেক খুশি। আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’ সন্তানদের পড়ালেখা করাতে নিজেদের প্রাণপণ লড়াইয়ের কথা বলেন বেলায়েতের মা হালিমা বেগম। তিনি বলেন, পড়ালেখার খরচ জোগাতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছেলের সাফল্য দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।

বেলায়েত হোসেন বলেন, দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাব। তারা যেন সফল হতে পারে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাব।

 

এবি 

×