ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

তাপমাত্রা কমেছে, উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০০, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

তাপমাত্রা কমেছে, উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ

ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে উত্তরাঞ্চল কাঁপছে। শীত থেকে রক্ষায় মা সন্তানকে গরম কাপড় দিয়ে আগলে রাখছেন

দেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। পড়ছে অতি ঘন কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আরও অন্তত দুই দিন থাকতে পারে।
বুধবার সকালে পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাত দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে দিনাজপুর ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমা হিমেল বাতাসে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। ওই অঞ্চলে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা কমে গেছে। বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর তিন ঘণ্টা আগে, ভোর ৬টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
ঢাকায় তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বেড়েছে। ভোর থেকে ঢাকার আকাশ ছিল কুয়াশায় ঘেরা। তবে বেলা বাড়তেই কুয়াশা কেটে উঁকি মারে সূর্য। বুধবার সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ও কিছু মেঘ বাংলাদেশের দিকে ভেসে আসছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দিল্লি-উত্তর প্রদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি হয়, তা হলে কুয়াশা কেটে যাবে।’
উত্তরের তিন জেলার দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও নীলফামারী ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও অন্তত দুই দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ও শুকবার শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকালের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের ধারণা, ঢাকার তাপমাত্রা আপাতত এর চেয়ে বেশি কমবে না।’
পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে অতি ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। অতি ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটতে পারে। অতি ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। আগামী অন্তত দুই দিন পরিস্থিতি একই রকম থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ভারতের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে, শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূলে বায়ুম-লের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যবর্তী অংশে একটি ঘূর্ণিঝড় পুঞ্জীভূত হতে শুরু করেছে। ফলে ভারতের উত্তর প্রদেশের মাঝামাঝি অংশ থেকে শুরু করে মধ্য প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বায়ুম-লের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের নিচের অংশে নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে।
পাটুরিয়ায় ৮ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ॥  দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে। শীত ও কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বগুড়ায় বুধবার ছিল মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ( ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আট ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও দিনাজপুরসহ গোটা উত্তরবঙ্গে তাপামাত্রা আরও কমেছে। ঘন কুয়াশায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ঢাকা থেকে আসা দুটি বিমান অবতরণ করতে পারেনি।

বুধবার বগুড়ায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতিও বাড়ছে। বাড়ছে কুয়াশার দাপটও। সকালের দিকে শীতের তীব্রতা থাকছে বেশি। তবে বেশি শীত অনুভূত হলেও আবহাওয়া অফিস বলছে এটি শৈত্যপ্রবাহ নয়। 
বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও বুধবার তা আরও কমে আসে। বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়া আহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও এখন তাদের নিকট শৈত্যপ্রবাহের কোনো পূর্বাভাস নেই। 
এদিকে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ও রাতে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এতে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি আনছে। কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কখনো হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শীতের তীব্রতা বাড়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দোপতন ঘটছে। নি¤œ আয়ের লোকজনকে শীত উপেক্ষা করে দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই নামতে হচ্ছে জীবন-সংগ্রামের পথে। ফুটপাতের দোকানি থেকে বিভিন্ন পেশায় থাকা দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের এতে কষ্ট বেড়েছে। বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগ।
রাজবাড়ী ॥ ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আট ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ। টানা আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৮টায় এই নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।  মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরিসহ সকলপ্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ হয়। সকাল সাড়ে ৮টার সময় এই নৌরুটে কুয়াশা কমে আসলে পুনরায় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ সময় ঘন কুয়াশায় নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় মাঝ নদীতে রোরো ফেরি শাহ পরান, রোরো ফেরি কেরামত আলী, রোরো ফেরি গোলাম মওলা ও ইউটিলিটি ফেরি ঢাকাসহ চারটি ফেরি বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নিয়ে নদীর মাঝে নোঙর করে থাকে। এদিকে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া উভয় ঘাটের পাড়ে প্রায় চার শতাধিক বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নদী পারের অপেক্ষায় থাকেন। তবে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো বাধাবিহীন নদী পারাপার হচ্ছে।

×