ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

যশোরে কুমার পাড়ায় ব্যস্ততা

শীতে খেজুরের রস ও গুড় রাখতে মাটির পাত্র তৈরির ধুম

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ০০:২০, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

শীতে খেজুরের রস ও গুড় রাখতে মাটির পাত্র তৈরির ধুম

খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হয়। এখন কুমারপাড়ায় মাটির এই ভাঁড় তৈরির ধুম পড়েছে

হেমন্তের শিশিরভেজা আর হাল্কা ঠাণ্ডা জানান দিচ্ছে শীত আসছে।  খেজুর গাছ থেকে নামবে মিষ্টি রস, গাছিরা খেজুরগাছ প্রস্তুত করেছেন। তাই যশোরের বিভিন্ন কুমোরপাড়ার চলছে ঠিলে (কলস) তৈরির ব্যস্ততা। যশোরের মনিরামপুর নেঙ্গুড়াহাট, মোবারকপুর, চাকলা, কাঁঠালতলা, যশোর সদরের রায়মানিক, চৌগাছার সাঞ্চাডাঙ্গা, বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলার কুমোরপাড়ায় তৈরি হচ্ছে খেজুর গাছে পাতার জন্য কলস।  
মৌসুমের শুরুতে কুমোরপাড়ার নারী পুরুষরা সবাই এখন আসন্ন শীতের খেজুর রস সংগ্রহের পাত্র মাটির ঠিলে(কলস) নিয়ে পার করছেন দিনের বেশিরভাগ সময়। ক্রেতারাও ছুটে যাচ্ছেন তা কিনতে। খেজুরগাছ পরিচর্যা শেষে রস নেওয়ার জন্যে বাঁধবেন মাটির ঠিলে বা ভাঁড়। নতুন পাতিলে রস আর গুড় এ মৌসুমে একটি কাক্সিক্ষত উপাদান। তাই মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুত হচ্ছেন রসের হাঁড়ি, পিঠার ছাঁচ, গুড়ের ভাঁড় তৈরি ও বিক্রয় করতে। যশোরের চৌগাছা, মণিরামপুরের রাজগঞ্জ, বাঘারপাড়ার খাজুরা রস  গুড়ের জন্য বিখ্যাত। ফলে এসব অঞ্চলে  রস, গুড়, পাতিলসহ বিভিন্ন উপাদান বেশি পাওয়া যায়। এসব এলাকার কুমোরপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের কুমোররা হরেক রকম মাটির জিনিসপত্র  তৈরির সাথে রস গুড়ের পাতিল  তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একদিকে চলছে কাদামাটির  তৈরি পাতিল রোদে শুকানো অপরদিকে চলছে বিশাল চুল্লিতে আগুনের তাপে পোড়ানো। এদিকে দিনে দিনে খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে তাই চাহিদা কম হলেও সীমিত লাভে হলেও এই পেশাটি ধরে রেখেছেন তারা। এই মৌসুমে এসব মাটির জিনিসপত্র উপজেলার বিভিন্ন বাজারে তাদের  তৈরিকৃত পণ্যের পসরা সাজিয়ে বেচাকেনা করেন। ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
মণিরামপুরের লক্ষণপুর গ্রামের ক্রেতা আব্দুস ছাত্তার ও রওশন গাছি বলেন, গুড়  তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাটির ঠিলে বা ভাঁড়, খুঁড়িতে রেখেই জমাতে হয় পাটালি। এ বছর ভালোমানের নতুন ভাঁড় কিনছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা প্রতিটি হিসেবে।
বড় আকারের লম্বা কলস ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কম দামে ভালো মানের জিনিস পেয়ে খুশি তিনি। এ বিষয়ে কথা হয় মণিরামপুরের মোবারকপুর কুমার পাড়ার আনন্দ, নিরাপদ, স্বপনসহ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, এ পেশায় আগের মতো লাভ হয় না, বংশের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি মাত্র। চাহিদা কম থাকায় দাম অনেক কম, এই ব্যবসা বাড়াতে পারিনি পূর্বের দামেই বিক্রি করছি। তবে এই মৌসুমে শীতের আমেজ আগেভাগেই তাই বেচাকেনা অনেক ভালো হবে বলে আশা করছি।
যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের ঋষিপাড়া ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ২৫-৩০টি পরিবার এ পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই ঋষিপাড়ার বিষুদেব পাল নামে এক কারিগর বলেন, আমরা পাঁচ ভাই মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমাদের সঙ্গে বাড়ির বউ-ঝিরাও কাদা মাটি দিয়ে দইয়ের খুঁটি, কড়াই, সরা, পাখির হাঁড়ি, রসের হাঁড়ি, কুপের পাট  তৈরি করে। এক সময় মাটি কিনতে হতো না কিন্তু এখন ৬০০ টাকা ট্রলি মাটি কিনতে হয়। প্রতি বস্তা কাঠের গুঁড়ার দাম ১৫০ টাকায় পৌঁছেছে। গোবর থেকে  তৈরি জ্বালানি ও ধানের খড়ের দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লেও আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমছে। একই এলাকার রতন পাল বলেন, ঋষিপাড়ার ৩০ পরিবার মৃৎশিল্পের কাজ করেন। মাটির জিনিসের ব্যবহার দিন দিন কমে যাওয়ায় আমাদের বেচাকেনাও কমে যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ব্যবসায় খুব মন্দা যাচ্ছে।

×