
হাত দিয়ে তাল ছুয়েছেন এক দর্শনার্থী।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই কমবেশি তালগাছ রয়েছে। বেশিরভাগ তালগাছ গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মিলে। বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে পুকুরপাড়ে দেখা যায় তাল গাছ। প্রত্যেক বাড়ির ভিটাতেই কম বেশি তালগাছ রয়েছে।
এবার বাকেরগঞ্জে এমন একটি তালগাছের সন্ধান মিলেছে যে তালগাছ দিয়ে শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ যে কেউ হাত বাড়ালেই গাছ থেকেই তাল ছিঁড়ে তালের শাঁসে তৃষ্ণা মেটাতে পারেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে কবাই ইউনিয়নের পাণ্ডব নদীর উপর নির্মিত পেয়ারপুর সেতুর উপর দাঁড়ালে সেতুর উত্তর পাশে কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি তালগাছ। গাছটিতে ১২ মাস তালের ফলন হয়। এই তাল গাছ আর তাল দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। অনেকে তালগাছের তাল ছুয়ে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ছবি।
গ্রীষ্মের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফলের নাম হলো তালের শাঁস। প্রচণ্ড গরমে এ ফলটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠের অর্ধেক সময় পর্যন্ত এ দেড় মাস চলে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। বিক্রেতারা স্থানীয়ভাবে এগুলো সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের নানা জায়গা থেকে আমদানিও করে থাকেন। এ ফল খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে অবিশ্বাস্য পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) পিয়ারপুর বাজারের স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে জনকণ্ঠকে তারা জানায়, যখন পাণ্ডব নদীর উপর সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয় তখন তালগাছটি সেতুর নিচে ছোট ছিল এখন গাছটি বড় হয়ে সেতুর উচ্চতাকে ছুঁয়েছে। গাছটির কচি তাল বেজায় সুস্বাদু। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের খরতাপে এই কচি তালের শাঁস তৃষ্ণা মেটায়। কচি তালের শাঁসে যে পানি থাকে তা শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। শরীরের ক্লান্তি দূর করে দেয়। ডাবের পানির মতোই একটি প্রাকৃতিক পানীয় খাবার এই কচি তাল। এই জন্য এর নামই দেওয়া হয়েছে পানিতাল। গ্রীস্মের এই গরমে এই গাছের তাল খেয়ে অনেক পথচারী পানিতালে তৃষ্ণা মেটান। এই সেতু দিয়ে অনেকে যানবাহন চালায় তারাই বেশিরভাগ সময় এই গরমে কচি তালের শাঁস তৃষ্ণা মেটাতে গাছ থেকে তাল ছিঁড়ে নেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাল গাছটি ৫০/৬০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হবে। সেই ৬০ ফুট উচুতে তাল গাছ বেয়ে উঠা সহজ ব্যাপার নয়। গ্রামের তালগাছ গুলোতে তাল কাটতে গেলে কেউ কেউ বাঁশ লাগিয়ে ওঠেন। কিন্তু ৬০ ফুট লম্বা বাঁশ মেলা দুষ্কর। আর বেয়ে উঠতে হলে মাথার দিকটা ভীষণ মসৃণ, তা বেয়ে ওঠা সহজ নয়। কথায়ই বলে, তাল গাছের আড়াই হাত। সেখানে তালের ড্যাগায় গোড়ার থেকে পাতা পর্যন্ত দেড়-দুই ফুট মোটা চ্যাপ্টা অংশ তার দুই দিকে কড়াতের মতো বসানো। যারা চাক্ষুস দেখেছেন তারা বোধ করতে পারবেন, যারা আগে দেখেননি তারা দেখলেই ভয় পাবেন। তবে এই পেয়ারপুর সেতুর তালগাছ থেকে কষ্ট ছাড়াই এই সুস্বাদু কচি কচি তালগুলো নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। তালগাছটি এখন উপজেলায় সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। গাছটিতে এখন শত শত তাল ঝুলছে। যা দেখলেই মন ও প্রাণ জুড়িয়ে যায় সবার।
এমএইচ