ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

নদীভাঙনে ভেসে যাওয়া স্বপ্ন: কণিকা রানীর বুকভরা কান্না

শামসুর রহমান হৃদয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ০১:২৯, ২১ জুলাই ২০২৫

নদীভাঙনে ভেসে যাওয়া স্বপ্ন: কণিকা রানীর বুকভরা কান্না

ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় নদীভাঙনে আজ নিঃস্ব কণিকা রানীর পরিবার। এক সময় সচ্ছল জীবনযাপন করলেও এখন তার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। গাইবান্ধার ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভয়াল ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন তিনি।

কণিকা রানীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন নদীভাঙনের নির্মম সাক্ষী। একসময় যেই ঘর ছিলো তার অস্তিত্বের প্রতীক, আজ তা শুধুই স্মৃতি। জায়গা-জমি, ক্ষেত-খামার, সব কিছুই একে একে হারিয়ে গেছে নদীর গর্ভে। কোথাও দাঁড়ানোর ঠাঁই না পেয়ে শেষমেশ ধার-দেনা করে কিছু টাকা তুলে আশ্রয় নেন ফুলছড়ি উপজেলার খোলাবড়ি এলাকায়। কিনেছিলেন এক চিলতে জায়গা, আশায় ছিলেন—এইখানে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

কিন্তু বিধি বাম। খোলাবড়িতেও বারবার নদীভাঙন কণিকার ঘরকে গ্রাস করেছে। গত পাঁচ বছরে তিনবার নদীর থাবায় তছনছ হয়েছে তার বসতভিটা। এখন যেটুকু জায়গা বাকি আছে, তাও হুমকির মুখে। ঘর থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই নদী। প্রতিনিয়ত তীব্র স্রোতে পাড় ধসে পড়ছে, নদী চলে এসেছে একেবারে ঘরের কোণায়।

কণিকার কণ্ঠে হতাশার সুর—‘আমার আর কিছু নাই। ধার করে যে জায়গাটা কিনেছিলাম, এখন সেটাও যদি নদী নিয়ে যায়, তবে কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো? চোখের সামনে ঘর ভাঙে, আর বুকটা কাঁপে শুধু সন্তানদের কথা ভেবে।’

এই গল্প শুধু কণিকা রানীর নয়—এটা বাংলাদেশের হাজারো নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের প্রতিচ্ছবি। প্রতিদিন নদীর তীরে গড়ে ওঠা নতুন কষ্টের ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠছেন তারা। কেউ হারাচ্ছেন বসতভিটা, কেউ হারাচ্ছেন কৃষিজমি, কেউবা হারাচ্ছেন প্রিয়জন।

নদীভাঙনের স্থায়ী সমাধান না হলে কণিকা রানীর মতো আরও অসংখ্য মানুষকে জীবনভর শুধু হারানোর গল্পই লিখে যেতে হবে। তাদের চোখে আজও একটিই স্বপ্ন—একটুখানি নিরাপদ আশ্রয়।

রাকিব

×