
২০০১ সালে মাত্র ২০০ কর্মচারী নিয়ে ভাড়া বিল্ডিং থেকে শুরু। আজ তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১২ হাজার মানুষ, বার্ষিক রপ্তানি ১২ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। জীবনের কঠিনতম মুহূর্তগুলো তাকে থামাতে পারেনি, বরং সেই সংগ্রামই হয়ে উঠেছে তার অনুপ্রেরণা- অনন্ত জলিল
অনন্ত জলিল জানালেন তার জীবন কাহিনী, যেখানে রয়েছে ট্রেনস্টেশনে বসে কান্না, শীত, বৃষ্টি আর হিম ঠান্ডায় ভেজা শরীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে ক্লায়েন্টের অফিসে পৌঁছানো — শেষে অপমান, গালাগালি।
“মৌজা খুলে দেখি দুই পা দিয়ে ব্লিডিং বের হচ্ছে”
ফ্রান্সের প্যারিসে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে পায়ের নিচে এত ফোসকা পড়ে রক্তপাত শুরু হয়। জীবনের সেই কঠিন দৃশ্য আজও তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় কোথা থেকে তিনি উঠে এসেছেন।
২০০৩ সালের ঘটনা: ইংল্যান্ডে ক্লায়েন্ট অফিসে গালাগালির মুখে পড়া
গার্মেন্টসের ব্যবসায় যাত্রার শুরুতেই ঘটে চরম অপমানের ঘটনা। চায়না থেকে আমদানিকৃত টুইল শার্টের রং ধোয়ার পর উঠে যাওয়ায়, ব্রিটিশ বায়ার হোয়াটসঅ্যাপে স্পিকারে গালাগালি করতে থাকে। “ব্লিডিং? দিস ইজ বুলশিট! ইউ ক্যান টেক ইট ফ্রম আস”— এভাবে অপমানিত হয়ে তিনি লন্ডনে হিমশীতল বৃষ্টিতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লায়েন্ট অফিসে পৌঁছান, পুরো শরীর ভিজে যায়, ঠান্ডায় কাঁপতে থাকেন। অফিসে ঢুকে মালিকের ছেলের গালিগালিতে ভেঙে পড়েন।
“তখন মনে হচ্ছিল এই বিজনেসই আর করবো না”
শরীর ভেজা, ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা, গায়ে ব্যথা, আর গালাগালি— সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। “আমার ইগো, আমার ব্রেন এফেক্ট হয়ে গিয়েছিল”— জানান তিনি।
ফেরার পথে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে প্লেনের মধ্যে নিলেন নতুন শপথ
তিনি ঠিক করেন, আর কখনোই গার্মেন্টস শিপমেন্ট করবেন না টেস্ট ছাড়া। ফ্যাব্রিক চায়না থেকে এলে আগে ইনসপেকশন করানো হবে।
এই সিদ্ধান্তই বদলে দেয় তার ব্যবসার ভাগ্য।
আজ তার প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার কর্মী, ৬৪ বিঘার নিজস্ব ক্যাম্পাস
একসময় যেখানে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পা থেকে রক্ত পড়ত, আজ সেখানে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে হাজার হাজার মানুষ কাজ করছেন।
ছাত্রদের প্রতি পরামর্শ:
অনন্ত জলিল বলেন, “স্টুডেন্ট লাইফেই সময় অপচয়ের সাথে সাথে কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে। বিদেশে ছাত্ররা লেখাপড়ার সময়ই চাকরি পায়, আমাদের দেশে সেটা পরে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্ট্রাগল ছাড়া কিছু আসবে না, তবে স্ট্রাগলের সাথে সততা থাকতে হবে।”
তিনি বিশ্বাস করেন, জীবনের প্রতিটি কষ্ট একেকটি সিনেমার গল্পের মতো। “স্ট্রাগল দিয়েই সফলতা আসে”— এটিই তার জীবনদর্শন।
Jahan