
সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে বহির্বিভাগের রোগীদের চোখে দেখা একটি সাধারণ দিনের অসাধারণ যন্ত্রণা।
ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রস্তুতি। হাতে রিপোর্ট, পুরোনো প্রেসক্রিপশন, আর ছোট একটা পলিথিন ব্যাগে পানির বোতল। সাথে মা, বাবা, সন্তান বা স্বজন-নিম্নবিত্ত পরিবারের কেউ একজন যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে, ভরসার আর কোনো জায়গা নেই তো!
বলছিলাম সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এমন দৃশ্য প্রতিদিন। যেন এক অনিয়মের নিয়মিত ছবি। টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের স্রোত। কোনো চেয়ার নেই, ছায়া নেই, শৃঙ্খলাও নেই। দীর্ঘ এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শুধু একটা টিকিটের জন্য।
লাইনে দাঁড়িয়েই দিন শুরু, লাইনে দাঁড়িয়েই দিন শেষ, টিকিটের পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবার লাইন। খাতায় নাম লেখাতে সময় লাগে আরও আধাঘণ্টা। তারপর চিকিৎসকের দরজায় ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ৪০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক। বসার জায়গার অভাব, কেউ কারো কথা শুনতে চায় না-শুধু ডাক্তার আসবেন, এই অপেক্ষা।
চিকিৎসা? হয়তো এক মিনিটের কথাবার্তা। অনেকেই দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন, “গলা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করে। অ্যাটেন্ডেন্ট শুনেন, মাথা নাড়েন, প্রেসক্রিপশন তুলে দেন। লেখা থাকে-দুইটা ট্যাবলেট, আর বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কিছু পরীক্ষা করানোর নির্দেশ।
ফ্রি চিকিৎসার নামে ছুটে চলা, সরকারি ফার্মেসিতে আবার লাইন। কখনো ওষুধ থাকে, কখনো থাকে না। আর থাকলেও সেটা পেতে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
দিন তখন প্রায় শেষ। যে মানুষটি সকাল বেলা এসেছিলেন সরকারি সেবা নিতে, তাঁর মুখে এখন ক্লান্তি, হতাশা আর প্রশ্ন-এই কি সেই ‘ফ্রি চিকিৎসা’ যার স্বপ্ন দেখিয়েছিল রাষ্ট্র?
হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা যেন নিয়মিত দৃশ্য। পর্যাপ্ত কাউন্টার নেই, জনবল নেই, রোগীর চাপ কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
সেবার নামে এই অব্যবস্থা কবে শেষ হবে? ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি দেখছে প্রতিদিনের এই ধৈর্যের প্রাচীর? প্রশ্ন থেকেই যায়- স্বাস্থ্যসেবা কি শুধুই প্রেসক্রিপশনে লেখা কয়েকটি ট্যাবলেট, নাকি একজন মানুষের মর্যাদাপূর্ণ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার।
Mily