ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ষোলঘর 

একই স্থানে বারবার সড়ক দুর্ঘটনা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২৬ মার্চ ২০২৩

একই স্থানে বারবার সড়ক দুর্ঘটনা

ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরের ষোলঘর যাত্রী ছাউনি থেকে বেজগাঁও যাত্রী ছাউনি পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দুর্ঘটনাপ্রবণ। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এই এলাকায় ২-৩টি দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গেল সপ্তাহে ষোলঘরে পৃথক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই একই এলাকায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনারোধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বমানের এক্সপ্রেওয়ে যানবাহনগুলোর গতিসীমা না মানা, যত্রতত্র ওভারটেকিং করা, রাতের বেলা পর্যাপ্ত ফ্লাডলাইট না থাকা ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনীহা অন্যদিকে এসব দুর্ঘটনায় বড় আঘাতজনিত আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে একটি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হলেও ৫ বছরেও তা চালু হয়নি। এতে দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জ অংশে ৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মরদেহ ও ১১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। 
ফায়ার সার্ভিসের মতে, ঈদ সামনে রেখে রমজান মাসে দুর্ঘটনা রোধে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে মুন্সীগঞ্জ অংশের তিনটি প্রশাসনিক জোনে পৃথকভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয়দের সচেতন করা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। একই এলাকায় বারবার দুর্ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন খৈয়ারপার এলাকা থেকে ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমে ষোলঘর বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পশু হাসপাতাল, একাধিক উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে যাতায়াত করতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও সবাই ব্যবহার করে না। স্থানীয় বাসিন্দা মেহিদী হাসান বলেন, ফুটওভার ব্রিজের সিড়িগুলো অনেক উঁচু। বেশি বয়সী মানুষ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে না। ফুটওভার ব্রিজের বদলে আন্ডারপাসে দুর্ঘটনাও কমবে। পাশাপাশি স্থানীয়দের ভোগান্তিও কমবে। দুর্ঘটনার তথ্য নেই ॥ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মহাসড়কের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজা অংশের মহাসড়ক দেখভালের দায়িত্ব হাসাড়া হাইওয়ে থানার। এই এলাকায় যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায়ও কাজ করেন তারা। কিন্তু মহাসড়কে দুর্ঘটনার কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য দিতে পারেননি থানার ওসি।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের অংশে প্রায় প্রতি সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। শ্রীনগরের ষোলঘর অংশ বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। তবে ঠিক কতটি দুর্ঘটনা এখন পর্যন্ত হয়েছে তার তথ্য তাদের কাছে নেই। 
ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ ॥ পদ্মা সেতু চালুর পর গত ৯ মাসে ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা পর্যন্ত অংশে ৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় দশ জনের মরদেহ ও ১১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে এটি প্রকৃত সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র নয়। কারণ অনেক দুর্ঘটনায় শুধু পুলিশই উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে। তারা যখন অবস্থা বেগতিক দেখে তখন ফায়ার সার্ভিসকে জানায়। এসব মন্তব্য শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. মাহফুজ রিবেনের। 
১৩ বছরেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার ॥ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক দুর্ঘটনায় বড় আঘাতজনিত আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মহাসড়কের ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ষোলঘরে ২০১০ সালে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যা বিশিষ্ট ৩ তলা ভবনের ট্রমা সেন্টার নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই দফায় কাজ শেষে ২০১৮ সালে দৃশ্যত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর হয়নি।

অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল সংকটের কারণে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ হওয়ার ৫ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, শনিবার এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি খুব দ্রুত পরিদর্শনে আসবেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বাড়ায় ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে আমাদের তোড়জোড় রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এটি চালু করা সম্ভব হবে।

×