ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাঁ খাঁ করছে কাটাগাঙ

কাজে আসেনি ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্খনন

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৪ মার্চ ২০২৩

কাজে আসেনি ২০ কোটি  টাকা ব্যয়ে পুনর্খনন

২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন করা কাটাগাঙ খাল এখন পানিশূন্য

বোরো আবাদের জমিতে এখন পানি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু গাঙে পানি নেই। কৃষক হা-পিত্যেশ করছে পানির জন্য। মাত্র দুই থেকে আড়াই বছর আগে চলনবিলের যে গাঙটি পুনর্খনন করা হলো সেই গাঙ এখন পানি শূন্য। পুনর্খননকৃত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চলনবিলের কাটাগাঙটি এখন খাঁ খাঁ করছে। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষককে সেচ সুবিধা দিতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাঙটি পুনর্খনন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে চলমান বোরো মৌসুমে তা কোনো কাজেই আসছে না। যথাযথভাবে গাঙটি খনন না করায় পৌষের পর পরই পানিশূন্য হতে থাকা গাঙটি চৈত্রের শুরুতে একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না, মৎস্যজীবীদের দেশী মাছও শিকার বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি পানিশূন্যতায় নৌ চলাচলও বন্ধ আছে, তাড়াশের ভেটুয়া গ্রামের কৃষক হাসমত আলী এভাবেই বর্ণনা দিলেন পুনর্খনন করা গাঙ সম্পর্কে। কুন্দাইল গ্রামের কৃষক জাকিরুল ইসলাম জানান, কাটাগাঙটি পুনর্খনন করায় গাঙ সংলগ্ন এলাকার কৃষকেরা খুবই খুশি হয়েছিলেন। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে বোরো এবং রবি শষ্য আবাদে সেচ কাজে যে অর্থ কৃষকের ব্যয় হয়, তার চেয়ে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে খাল থেকে প্রাকৃতিক পানি উঠালে সেচ খরচ প্রায় অর্ধেক কমে আসে। অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ জমিতে পানি দেওয়া যায়।

কুন্দাইল গ্রামের আরেক কৃষক রমজান আলী জানান, গাঙটি পুনর্খনন করার সময় নির্ধারিত খননের গভীরতায় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই সঙ্গে গাঙের খনন করা মাটি গাঙের পাড় বা তীরে আলগাভাবে রাখায় গত দুটি বর্ষা মৌসুমেই সেই মাটি গলে আবার সেই খালের তলানীতে গিয়েই পড়েছে। তাতে করে অল্প সময়ে গাঙটির বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষক, মৎস্যজীবী, নৌ চলাচল কোনো ক্ষেত্রেই কাটাগাঙ পুনর্খননের সুফল পাচ্ছে না জানালেন কুশাবাড়ি এলাকার ইঞ্জিনচালিত নৌ-মালিক মিরাজুল ইসলাম।

কাটাগাঙটি ১২-১৪ ফুট পর্যন্ত গভীর করে খনন কাজ করার কথা ছিল। যাতে করে বোরো মৌসুমের পুরো সময়টায় কাটাগাঙ তীরবর্তী এলাকার বোরো রবি শস্য চাষিরা তাদের ফসলি জমিতে উন্মুক্তভাবে সেচ দিয়ে আর্থিকভাবে উপকৃত হতে পারেন। সেই সঙ্গে নদীর নাব্য ফিরে আসলে গ্রীষ্মকালে মাছের প্রজনন সময়কালে জলপুর্ণ গাঙটি মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়নি বলে জানান, মাকড়শোন এলাকার মৎসজীবী  জব্বার আলী।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান জানান, ধরনের ক্ষুদ্র কাজ করে চলনবিলের কোনো কাজে আসবে না। চলনবিলের উন্নয়ন করতে হলে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ করা মানে শুধু কিছু ব্যক্তির লাভ হবে। আর সরকারি কর্মকর্তার লাভ হবে। কিন্তু মানুষের কোনো উপকার হবে না। ধরনের কাজ করে চলনবিলের কোনো সুফল হবে না।

শুধু ওই প্রজেক্ট যারা বাস্তবায়ন করেছেন তাদেরই লাভ হবে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলনবিল অঞ্চলের কাটাগাঙ অধ্যুষিত এলাকার শত শত কৃষককে বিনামূল্যে সেচ সুবিধায় আনতে, বর্ষাকালে পণ্য পরিবহন নৌ-চলাচলে নাব্য সংকট দূর করতে এবং মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছের অভয়াশ্রম করতে চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার ভেটুয়া থেকে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলা অষ্টমনিষা এলাকা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ওই গাঙ পুনর্খনন করা হয়।

×