ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান ৩ কারণ ও ১৪ সুপারিশ

বাস উল্টে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রেস ব্রিফিং 

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২২ মার্চ ২০২৩

বাস উল্টে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রেস ব্রিফিং 

প্রেস ব্রিফিং

মাদারীপুর শিবচর এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস উল্টে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা দুর্ঘটনার মূল ৩ কারণ উল্লেখসহ ১৪টি সুপারিশ করেছেন এ রিপোর্টে। যে কারণে এতোগুলো প্রাণহানি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ। যেখানে বলা হয়েছে, ইমাদ পরিবহনটি মেয়াদোর্ত্তীণ, চালকের মধ্যম যান চলাচলের লাইসেন্স থাকলেও চালিয়েছে ভারী যানবাহন ও ও বৃষ্টিভেজা সড়কে বেপারোয়া গতিতে গাড়ী চালানো। 

বুধবার বেলা ১২টায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা। এসময় এই এক্সপ্রেসওয়ে দুর্ঘটনা রোধে ১৪টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়। প্রশাসন দুর্ঘটনারোধে  কঠোর ভূমিকার আশ্বাস দিচ্ছেন। 

তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা বলেন, বেপরোয়া গতির কারণে গেলো বছরের ১৭ নভেম্বর ইমাদ পরিবহনটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। শুধু তাই নয়, পরিবহনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি। তারপরেও সদর্পে চলছিল ইমাদ পরিবহন। যে কারণে গেলো ১৯ মার্চ সকাল ৮ টায় মাদারীপুরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসয়ে ঘটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। এছাড়া চালকের পেশাদার লাইসেন্স মাধ্যম থাকলেও চালিয়েছেন ভারী যান। অন্যদিকে দুঘর্টনার দিন বৃষ্টিভেজা রাস্তা থাকার কারণে চালকের অসচেতনতার কারণে দুঘর্টনা ঘটেছে।’

তিনি আরো বলেন, সড়ক মৃত্যুর মিছিল কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, চালক ও সংশ্লিষ্ট সকলের লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সকল বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করতে হবে, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতিসম্পূর্ণ গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান করতে হবে, গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে করা, এক্সপ্রেসওয়ের উভয়াপাশে গার্ড রেইল স্থাপন করতে হবে। এই রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেন ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এছাড়াও মহাসড়কে চলাচলকারী সকল পরিবহনের হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত ডেটাবেইজ রাখতে হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য লোকবল ও টহল গাড়ি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে রাতে, ভোরে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতি অপেক্ষাকৃত কম রাখতে হবে। দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক ও মহাসড়কের সিটি টিভি, ট্র্যাকার, অনলইন মনিটরিং জোরদার করতে হবে।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা, কমিটির সদস্য মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন। 

উল্লেখ্য, রবিবার ভোর চারটার দিকে খুলনার ফুলতলা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পরে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটির চালক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে বাসটি ছিটকে পড়ে যায়। এরপর এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের দেয়ালের সঙ্গে সজোড়ে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক জাহিদ হাসান, তার সহকারী ইউসূফসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার জন্য ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজসহ আরও  ২ যাত্রীর মৃত্যু হয়।

টিএস

×