
বিসিক শিল্প নগরী
অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে জামালপুরের বিসিক শিল্পনগরী। দীর্ঘ দিনেও শিল্পকারখানাটিতে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় একদিকে যেমন নগরীর শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিততে, তেমনি নতুন উদ্যোক্তারা শিল্প কারখানা করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। দিনের পর দিন লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কল কারখানা। ফলে শিল্পনগরীটি এখন পরিণত হয়েছে গরু ছাগলের চারণভূমিতে। আর নগরীর ভিন্ন জটিলতার কথা স্বীকার করেছেন শিল্প নগরীর কর্মকর্তা নিজেও। জানা গেছে, ১৯৮০ সালে জামালপুর জেলাকে শিল্পনগরী হিসাবে গড়ে তুলতে শহরের দাপুনিয়া এলাকায় ২৬ একর জমিতে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দুই ক্যাটাগরিতে ১৫০টি প্লট বরাদ্দ দিয়ে যাত্রা করে করে। শুরুটা ভালো হলেও সেই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা ১৯৭টি প্লট বরাদ্দ নেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। কিন্তু দিনের পর দিন শিল্পনগরীর কোন উন্নয়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শিল্প নগরীতে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ৮৬ কারখানার মধ্যে বর্তমানে ৫৬টি কারখানা চালু রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই ৫৬টি কারখানাও চলছে ঢিমেতালে চলতে চলতে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হতে চলেছে। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরীটি ভূতুরে নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখানকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা আর্বজনায় নোংরা পরিবেশ শিল্পকারখানার মালিকদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের কারখানার মালামাল পরিবহনে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। এখানকার রাস্তা দিয়ে ট্রাক তো দূরের কথা রিকসা চলাচল করা যায় না।
ফলে তাদের অতিরিক্ত খরচ দিতে ট্রাকসহ যানবাহন চলাচল করে। ব্যবসায়ীরা বলেন, দিনের বেলায় যেমন তেমন রাতে শিল্প নগরীটি হয়ে উঠে অপরাধী নেশাখোরদের আস্তানা। হিজরা এবং মাদকসেবীদের ভয়ে নিরাপত্তাহীয়তায় রয়েছেন তারা। এই কারণে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা এখানে শিল্প কারখানার করার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিসিক এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার নোংরা আর্বজনা আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। দূর থেকে দেখা মিলে একটি ইজিবাইক লক্কর জক্কর করে বেশি কিছু চালের বস্তা নিয়ে বের হচ্ছে। চালক খলিলকে রাস্তাঘাটের অবস্থা জিজ্ঞেস করতেই বলেন, এটা কিরকম বিসিক। এখানে কোন যাত্রী বা মালামাল নিয়ে চলাচল করা যায় না। ১০০ টাকা ভাড়া মারলে দেড়শ’ টাকা খরচ হয়। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়। এখন শুকনাকাল তাই এই অবস্থা। সামনে বর্ষাকাল এলেই এখানে হাটু কোমর পানি জমে থাকে। আরসিআই কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক রফিক আহম্মেদ বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর সমস্যার শেষ নেই।
এ নিয়ে আন্দোলন পর্যন্ত করেছি কোন কাজ হয়নি। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় এখানকার শিল্পকারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। দিনের বেলাই ভুতুরে পরিবেশ থাকে। তাহলে বুঝেন রাতের অবস্থা কেমন হয়। এখান থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। অনেকেই শিল্প কারখানা করতে আসেন কিন্তু এখানকার পরিবেশ দেখে ফিরে যায়। বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান মিলন বলেন, বিসিকের অবস্থা ভালো নেই। এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার মতো কোন সুযোগ সুবিধা নেই। দুই বছর হলো ড্রেনের কাজ চলছিল। ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেছে। রাস্তার বেহালদশা।
কোন মালিক কর্মচারীর নিরাপত্তা নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার বসেও কোন কাজ হয়নি। নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা আসে কিন্তু এখানকার পরিবেশ দেখে ফিরে যায়। জামালপুর বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সম্রাট আকবর শিল্প কারখানার ভিন্ন জটিলতার কথা স্বীকার করে বলেন, সেটা নিরসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, ময়লা, আর্বজনা সরানোর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিল্প নগরীতে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ৮৬টি কারখানার মধ্যে বর্তমানে ৫৬টি কারখানা চালু রয়েছে।
এমএস