ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তি মিশনে সন্তান হারানো বাবা-মায়ের উক্তি ॥ স্ত্রী অসুস্থ

‘আমাদের ছেলে বীরের মতো শহীদ হয়েছে, এমন মৃত্যু গর্বের’

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:০১, ৬ অক্টোবর ২০২২

‘আমাদের ছেলে বীরের মতো শহীদ হয়েছে, এমন মৃত্যু গর্বের’

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামী হারানোর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ায়

‘আমাদের ছেলে বীরের মতো শহীদ হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এমন মৃত্যু গর্বের। আমাদের সন্তানের গর্বে আমাদের বুক ভরে গেছে। দশ মাস আগে শান্তি মিশনে যাওয়ার সময় ছেলে আমাদের একটা ফুটফুটে বৌমা দিয়ে গেছে। পুত্রবধূ শিমু আক্তারকে আমরা আগলে রাখব। আমাদের ঘরে তো মেয়ে সন্তান নেই। সে আমাদের মেয়ে হয়ে থাকবে।’ বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই কথা বলছিলেন সন্তান হারানো বাবা-মা।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে বোমা বিস্ফোরণে যে তিনজন বাংলাদেশী সেনা শহীদ হয়েছেন তার মধ্যে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম একজন। এ ঘটনায় দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামজুড়ে চলছে মাতম। এই গ্রামই জাহাঙ্গীর আলমের জন্মস্থান। বাবা লতিফুর রহমান একজন আদর্শ কৃষক। মা গোলেনুর বেগম গৃহিণী। পাঁচ ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর তাদের চতুর্থ সন্তান।
নিহত জাহাঙ্গীরের স্বজনরা ভাসছে শোকের সাগরে। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিমু আক্তারকে স্বজনরা সামলাতে পারছে না। চিরতরে স্বামী হারানোর বেদনা চাপা রাখতে পারছে না শিমু। স্বামীর ছবি বুকে ধরে করছে আহাজারি। প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করছেন। সকলেই কাঁদছেন। সান্ত¡না দেয়ার ভাষাও যেন সকলে হারিয়ে ফেলেছে। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এদিকে প্রচুর কান্নাকাটিতে শিমু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাড়িতেই চিকিৎসক এনে তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।

দেয়া হচ্ছে স্যালাইন। তবে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে জাহাঙ্গীরের মা গোলেনুর বেগম বলছিলেন, আগামী রোজার ঈদে ছেলে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। সেতো আর ফিরবে না। আসবে তার মরদেহ। ছেলের মরদেহ মানে একজন শান্তিরক্ষী বীর সৈনিকের লাশ। আমি সেই বীরের মা। এই কথা বলেই তিনি হু-হু করে কেঁদে উঠেন। বাবা লতিফুর রহমান মনোবল ধরে রেখেছেন। তিনি বললেন, আমি তো কৃষক মানুষ। আমার সন্তান বিদেশে গিয়েছে।

বিদেশে শান্তিরক্ষার কাজে জীবন দিয়েছে। আমিতো একজন বীর সন্তানের বাবা। তিনি স্বজনদের কান্নাকাটি করতে নিষেধ করে বলছিলেন সকলে আমার ছেলের জন্য দোয়া করেন। মহান সৃষ্টিকর্তা আমার ছেলেকে যেন জান্নাতবাসী করেন। তবে এই বাবার দাবি সন্তানের মরদেহ তিনি গ্রামে দাফন করতে চান।
জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই আবুজার রহমান। তিনিও সেনাবাহিনীর একজন জোয়ান সদস্য। ছুটিতে এসেছেন বাড়িতে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় জাহাঙ্গীর। এক বছর আগে বিয়ে করেছিল। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যায়। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের ফোন করে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছে। জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মোঃ বাদশা বলেন, ভাইয়ের মরদেহ দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। শেষবারের মতো ভাইয়ের মুখটা দেখতে চাই।

×