কাটাখালীতে বিএমডিএ’র ২৫ কোটি টাকার খাল
পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এসব প্রকল্প কোন কাজে আসছে না। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে খাল খনন করা হলেও সেটি কোন কাজে আসেনি। রাজশাহীর কাটাখালীতে বাস্তবায়ন করা খালটি পানি প্রবাহের পরিবর্তে এখন ওই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অথচ এ খালটি খননে ব্যয় করা হয়েছে সরকারের ২৫ কোটি টাকা।
রাজশাহীর কাটাখালী বাজার থেকে শ্যামপুরের দিকে নামতে রাস্তার ডান পাশেই চোখে পড়বে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এক বছর আগেই এটি খাল হিসেবে ধরে খনন বাবদ ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। কিন্তু কোন কাজে আসেনি ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। বছর না ঘুরতেই খালগুলো আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
জলাবদ্ধতা দূর করতে ও বর্ষার পানি জমা রেখে সেচ কাজে ব্যবহার উপযোগী করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহীর চার উপজেলায় খাল খনন করে। গেল তিন অর্থবছরে রাজশাহীর চার উপজেলায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। গত বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। প্রকল্পের দরপত্র অনুযায়ী খালগুলো তিন থেকে নয় ফুট খনন হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নেয়া এই প্রকল্পটির কারণে অনেকে এখন বসতি হারাতে বসেছেন।
বিএমডিএ সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা দূর করতে ও নদীর পানি সেচের কাজে লাগাতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর চার উপজেলায় খাল খননে প্রকল্প নেয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে- বাঘা উপজেলার মুর্শেদপুর-নওটিকা খাল ৫.৭০ কিলোমিটার, চাঁদপুর-ব্যাঙ্গাড়ী খাল ১.১১ কিলোমিটার, পুঠিয়া উপজেলার চ্যাংড়ার বিল খাল ১.৩০ কিলোমিটার, চারঘাট উপজেলার মেরামতপুর-পিরোজপুর ২.১০ কিলোমিটার ও চারঘাট-পবা ও পুঠিয়া উপজেলার মাঝ দিয়ে যাওয়া শাহাপুর-কাটাখালী-ছত্রগাছা ১৪.৯২ কিলোমিটার খাল খনন। গত বছরই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে শাহাপুর-কাটাখালী-ছত্রগাছা পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার খালটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পাশে বসবাস করা মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। অনেকের বাড়ি ভেঙ্গে গেছে।
কাটাখালী মোল্লাপাড়ার আফাজ উদ্দিন জানান, অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় অনেকের বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। অনেকে ঝুঁকির মধ্যে আছেন তারা। জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। উল্টো মানুষ বসতি হারিয়েছে। আগের মতো ভরাট হয়ে গেছে খালটি। মোকসেদ নামের আরেকজন জানান, পদ্মা নদীতে পানি যাতে সহজে চলাচল করতে পারে, সে জন্য খালটি খনন করা হয়েছিল। কিন্তু পানি নামেও না আবার পদ্মা থেকে খালে পানি আসেও না। এখন মানুষ দৈনন্দিন কাজের বর্জ্য ফেলছেন ওই খালে।
প্রকল্প পরিচালক নাজিরুল ইসলামের দাবি, ঠিকাদার প্রথমে কাজটি ভালভাবে করেনি। তাগাদা দেয়ার পর সঠিকভাবে কাজ করেছে। বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, কৃষক ও জনগণের স্বার্থ দেখার জন্য বিএমডিএ। জনস্বার্থে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সেটি নেয়া হবে। খালটি সঠিকভাবে খনন করা হয়েছে কিনা- তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।