প্যারাবনের কেওড়া, বাইন গাছ কেটে অপসারণ করে চরের জায়গা চিংড়ি ঘেরে একীভূত করে নেয়ার দৃশ্য
চকরিয়ার চিংড়ি জোন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা খালের চরে জাপানী এনজিও কর্তৃক সৃজন করা ও প্রাকৃতিভাবে গড়ে উঠা প্যারাবন ধ্বংসের কার্যক্রম থেমে নেই। প্রভাবশালী চিংড়ি চাষিরা এভাবে নিজেদের সুবিধামত পরিবেশ বিপন্নকারী প্যারাবনের গাছ কেটে ফেলায় এখানকার সবগুলো চিংড়ি ঘের আশানুরূপ চিংড়ি উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া এসব প্যারাবন ধ্বংসের কারনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জলোচ্ছাস ঠেকানো ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
গত ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে সংঘটিত প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বৃহত্তর চকরিয়া (চকরিয়া ও পেকুয়া) উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ৩০/৩৫ ফুট উচুঁ সামুদ্রিক জলোচ্ছাস আঘাত হানে। এতে চকরিয়ার প্রায় সাড়ে ১৭হাজার লোক প্রাণ হারায়। হাজার হাজার গবাদিপশু ও মানুষের লাশ একাকার হয়ে যায়। মূলত চকরিয়া সুন্দরবনের প্রায় ৩০হাজার একর এলাকার প্যারাবনের কেওড়া, গেওয়া, বাইন প্রভৃতি জাতের গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরী করায় সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ঠেকানো যায়নি। পরে জাপানের কিছু পরিবেশ প্রেমিক সংগঠন চকরিয়া সুন্দরবন এলাকার খাল ও নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার দু’ধারে জেগে উঠা চরে লাখ লাখ কেওড়া, গেওয়া ও বাইন গাছের চারা রোপন করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালায়। চিংড়ি ঘেরের পাশাপাশি প্যারাবন সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে আশা জেগেছিল যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছুটা হলেও এসব প্যারাবন জলোচ্ছাস ঠেকাবে। কিন্তু লোভী কতিপয় প্রভাবশালী চিংড়ি চাষি এসব প্যারাবন দেদারছে কেটে ফেলে রিং বাঁধ দিয়ে চরের জায়গা জবরদখল করে নিজেদের ঘেরের সঙ্গে একীভূত করে নিচ্ছে। এমনকি প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়েও ঘেরের আওতা বৃদ্ধি করে চলেছে।
সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহত-উজ-জামানের নির্দেশে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবুল মনসুর কাঁকড়াদিয়া খালে নির্মিত অবৈধ ক্রস বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন। কিন্ত খবর নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে আবার সেই ক্রস বাঁধ নির্মাণ করে চিংড়ি ঘেরের আওতা বৃদ্ধিতে অসংখ্য শ্রমিক নিয়োগ করেছে জনৈক চিংড়ি চাষি।
এসব পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যকলাপের সবিস্তারে উল্লেখ করে পরিবেশ সচেতন সাংবাদিক এম,আর মাহমুদ ও মনসুর রানা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা অবিলম্বে প্রবাহমান খালের নির্মিতব্য বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করে প্যারাবন রক্ষার আহবান জানিয়েছেন।
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, প্যারাবন ধ্বংস ও প্রবাহমান খাল দখল প্রক্রিয়া বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানান, এসব অপকর্ম বন্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ বিনষ্ট করতে দেয়া যায়না। এলাকার সচেতন লোকজনকেও এ ব্যাপারে সম্পৃক্ত করে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে।