ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে অযত্নে পড়ে আছে কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্পত্তি

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২১

বরিশালে অযত্নে পড়ে আছে কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্পত্তি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ নগরীর কাউনিয়া এলাকার প্রায় চার একর জমি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। জমির মালিক বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই জমির একাংশে কতিপয় কারারক্ষী ঘর তুলে বসবাস করছেন। পাশাপাশি কিছু অংশে বিভিন্ন ফসলাদি চাষ করা হচ্ছে। অথচ গত প্রায় ২০ বছর পূর্বেও কারা কর্তৃপক্ষ এ জমিতে নানা ফসল উৎপাদন করত। দীর্ঘদিন থেকে অযতেœ পড়ে থাকায় ওই জমি বর্তমানে আগাছায় ভরে গেছে। সম্পত্তির প্রাচীর ঘিরে ভাসমান দোকানপাট এবং ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অথচ বর্তমানে কাউনিয়া এলাকার অবকাঠামোগত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় ওই জমি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন, কারারক্ষীদের জন্য আবাসন নির্মাণ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে সরকার। আর ওই জমিতে বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় এবং বাসভবন নির্মাণের কথা থাকলে এখনও তা অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছে। সূত্র মতে, বিভাগীয় শহর বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে ১৮২৯ সালে জেলা কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ যা জেলা কারাগার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তর করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষের মোট জমির পরিমাণ ২১.২০০৭ একর। কারা অভ্যন্তরে জমির পরিমাণ ৯.৬০০ একর। কারা ফটকের মধ্যে জমির পরিমাণ ৭.৬৮২৬ একর (বাসা বাড়ি, মাঠ ও পুকুর) এবং নগরীর কাউনিয়ার বাগানবাড়ি এলাকায় জমির পরিমাণ ৩.৯১৮১ একর। সূত্র মতে, কাউনিয়া এলাকার প্রায় চার একর জমির মধ্যে বৃহৎ একটি পুকুর রয়েছে। এছাড়া ১০-১২টি পরিবার (কারা স্টাফ) ঘর তুলে বসবাস করছেন। এছাড়া প্রস্তাবিত কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জমিতে কিছু ফসলাদি চাষ করছেন কারা কর্তৃপক্ষ। আর বাকি প্রায় দুই একর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর পূর্বেও কারাগারের ওই সম্পত্তিতে বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন করা হতো। যা কয়েদিদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হতো। ওই এলাকার বাসিন্দা মাছুম তালুকদার বলেন, অতীতে কারাগারের এ জমি স্থানীয় যুবকরা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করত। তখন পুরো মাঠ-ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকত। তবে কয়েক বছর পূর্বে ওই জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় তা এখন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে ওই জমিতে আগাছা জমে পরিবেশ নোংরা হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের ছোঁয়া নগরীর কাউনিয়া এলাকায় অবকাঠামোগত আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে কারাগারের ওই জমি থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরেই বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটি শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) অবস্থিত। যেখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প কারখানা। সেদিক বিবেচনা করে কারাগারের ওই জমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ওই সম্পত্তির সীমানায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ছোট-বড় স্টল) গড়ে তোলা হলে একদিকে যেমন কারাগারের সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা কমত, অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আয়ও হতো। এ ব্যাপারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বলেন, কারাগারের সম্পত্তি পরিত্যক্ত বলা যাবে না। এটি যাহাতে বেহাত না হয়, সেজন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরাপত্তা বিষয়ক একটি টিম রয়েছে, যা হেডকোয়ার্টার নিয়ন্ত্রণ করছে। উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ওইটিম শীঘ্রই একটি প্রজেক্টের মধ্যে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
×