ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের এ খনিতে মজুদ ৫শ’ মিলিয়ন টন কয়লা

দিঘিপাড়া কয়লা খনি অনুসন্ধান ৯ বছর বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দিঘিপাড়া  কয়লা খনি অনুসন্ধান ৯ বছর বন্ধ

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ ‘খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দিনাজপুরের ৩টি কয়লাখনি ও একটি পাথর খনি রয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলার দিঘিপাড়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে ৫শ’ মিলিয়ন টন মজুদ কয়লাখনি। তবে সরকারের কয়লানীতি চূড়ান্ত না হওয়ায় দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এই খনির অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক যুগ ধরে ৫টি কূপ খনন করার পর গত ৯ বছর ধরে অনসন্ধানের কাজ বন্ধ রয়েছে। ৩৯০ মিলিয়ন টন মজুদ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এবং ৫৭২ মিলিয়ন টন মজুদ ফুলবাড়ি কয়লা খনি। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির পর নবাবগঞ্জ কয়লা খনিটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই অনুসন্ধানের কাজ বন্ধ রয়েছে। দিঘিপাড়া কয়লা খনির ৫টি কূপের বেসিন এলাকার পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এবং সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৫শ’ মিলিয়ন মেট্রিক টনের অধিক। এছাড়া সম্পদ হিসাবে ২শ’ মিলিয়ন সিলিকা বালু ও সাদা মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আরো বেশি কূপ খনন এবং জরিপের পর মজুদ কয়লার পরিমাণ বাড়তে পারে বলে খনি বিশেষজ্ঞমহল মনে করেন। দিনাজপুরের পূর্বাংশ জুড়ে যে প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং যাচ্ছে, তার মধ্যে ৪র্থ খনি হচ্ছে দিঘিপাড়ার কয়লাখনি। ১৯৯৫ সালে কয়লাখনিটি আবিষ্কৃত হয়। ভূপদার্থিক জরিপের ফলাফলে আনুমানিক ১০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেসিন এলাকা নিরূপণ করা হয়েছে। ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের তথ্য মতে, ত্রিমাত্রিক সাইজমিক জরিপ এবং অধিক কূপ খননের মাধ্যমে শুধু বেসিনটির প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে দিঘিপাড়া বেসিনের পরিধি এবং মজুদ কয়লার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে ও অধিকতর সল্প গভীরতায় কয়লা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর খনন শাখা ও ভূতত্ত্ব শাখা ১৯৯৫ সালে প্রথম কূপ খনন করে। তারা ৩২৭ দশমিক ৯৬ মিটার গভীরতায় উন্নতমানের গন্ডোয়ানার কয়লা খনির সন্ধান পায়। পরবর্তীতে গত এক যুগ ধরে আরও ৪টি কূপ খনন করা হয়। ২০০১ সালে প্রথম কূপ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এক স্কয়ার বর্গমাইল দূরত্বে দ্বিতীয় কূপ খনন করে ৩৮৩ দশমিক ৫৪ মিটার ভূগর্ভে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে একই ব্যবধানে দক্ষিণ-পূর্বে তৃতীয় কূপ খনন করে ৩৫৫ দশমিক ৯ মিটার ভূগর্ভে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৪ সালে একই ব্যবধানে উত্তর দিকে চতুর্থ কূপ খনন করে ৩২৩ দশমিক ৮ মিটার ভূগর্ভে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৬ সালে মার্চ মাসে দিঘিপাড়া থেকে পূর্ব-দক্ষিণে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে ৫ম কূপ খনন শেষে ৩৮৮ দশমিক ১ মিটার ভূ-গর্ভে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। খনি বিশেষজ্ঞ মতে, ৫ম কূপ খননের ফলে কয়লা খনির ক্ষেত্র দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ স্কয়ার মাইল এবং কয়লার মজুদ রয়েছে ১৫০ মিলিয়ন টন। সূত্র জানায়, কয়লাক্ষেত্রের চতুর্দিকে একই ব্যবধানে জরিপ চালানো হলে, কয়লাক্ষেত্র ও মজুদের পরিমাণ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধু ৫টি খননকৃত কূপে সম্ভাব্য অতিরিক্ত মজুদ ধরা হয় ৫শ’ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি। বেসিনটি বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ ১০টি ও সর্বনিম্ন ৪টি কয়লার স্তরসমূহের একীভূত অবস্থায় রয়েছে। মোট পুরুত্ব সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৩৬ মিটার ও সর্বনিম্ন ৪৭ দশমিক ২৯ মিটার। ৩টি কয়লা স্তরে ১ম স্তরের পুরুত্ব সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৮১ মিটার এবং সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭৯ মিটার। দ্বিতীয় স্তরে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৫৮ মিটার সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৬৩ মিটার। তৃতীয় স্তরে ১০ দশমিক ২৬ মিটার সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৯ মিটার। বেসিনটিতে সন্ধান পাওয়া কঠিন শিলাস্তরের ধরন ডায়োরাইট নাইস, গ্রানাইট ইত্যাদি। অন্যান্য সম্পদ সিলিকা বালু মজুদ প্রায় ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ও বিপুল পরিমাণ সাদা মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আর্দ্রতা ৩ দশমিক ২ ভাগ, উদায়ি পদার্থ হলো ৩০ ভাগ, ছাই ৯ ভাগ, স্থির কার্বন ৫৭ ভাগ, সালফার ৬৫ ভাগ, তাপ উৎপাদন মাত্রা ১২ হাজার ৯শ’। দিঘিপাড়ার কয়লা অতি উপাদয়ী উন্নত জাতের বিটুমিনাস কয়লা। খনি বিশিষজ্ঞরা মনে করেন, দিঘিপাড়ার কয়লা সবচেয়ে উন্নতমানের এবং কম খরচে উত্তোলন করা সম্ভব। এই কয়লা ব্যবহার করলে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হবে। দিনাজপুরের বৃহত এই তিনটি কয়লাখনি সঠিকভাবে উত্তোলন করা হলে দেশের জ্বালানি খাতে বিপ্লব ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন।
×