ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আঘাত হানতে পারে কাল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আঘাত হানতে পারে কাল

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা। বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকার গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় রূপ নিয়ে ক্রমশ স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে। শুক্রবার সকাল নাগাদ এটির স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং কোথাও কোথাও বৃষ্টিও দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, সুন্দরবন, পাবনা, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনসহ উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল এবং টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক জায়গায় সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বিকেল থেকে ঝড়ো হওয়া শুরু হয়। উপকূলীয় জেলা খুলনা, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, ঝালকাঠির ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এর প্রভাবে দেশের সব সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এটি অতিপ্রবল না হলেও প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এটি ১৫০ কিলোমিটার (কিমি) অর্থাৎ আইলার বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এতে তীব্র প্রভাব পড়তে পারে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে। অনেকের মতে, এটি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং ফণীর মতো শক্তিশালী।
আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় দানার অগ্রভাগ ভারতের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকায় বাংলাদেশে এর প্রভাব কিছুটা কম থাকতে পারে। তবে আঘাত হানলে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে সেটা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, এটি আসলে নির্ভর করে ঘূর্ণিঝড়টি কোনদিকে যাবে।

এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সেন্টার ওড়িশা আর পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় মূলত তার চারপাশেই শক্তি ছড়ায়। এটির ডানপাশে ৫০০ কিমি প্রভাব ফেললে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। আবার ঘূর্ণিঝড়টির সেন্টার যদি ওড়িশার দিকে যায়, তাহলে শুধু খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।
ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নরমাল থাকবে আশা করি। ঘূর্ণিঝড়টির বেশিরভাগ অংশ যদি ওড়িশার দিকে থাকে, তাহলে আমাদের দেশে কম প্রভাব পড়বে। 
আবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে হলে একটু বেশি পড়বে। সেটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে বোঝা যাবে। ধারণা করা যাচ্ছে, কিছুটা আম্ফানের মতো হতে পারে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলে আঘাত করলেও এর প্রভাব ভালোভাবে পড়বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপরে।
আবহাওয়াবিদ জেবুন্নেছা বলেছেন, এবারের ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ বা ওড়িশা দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে। তবে কাছাকাছি এসেও অনেক সময় গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। তবে খুলনা ও বরিশালে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এখন পর্যন্ত আমাদের এদিকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম দেখছি। বৃহস্পতিবার সকালে এর শক্তি সম্পর্কে বোঝা যাবে।
৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত ॥ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ভারি বৃষ্টির আভাস ॥ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথও মাঝারি ধরনের ভারিবর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া শুক্রবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথও মাঝারি ধরনের ভারিবর্ষণ হতে পারে।
পায়রা থেকে ৫৯৫ কিমি দূরে ॥ আবহাওয়ার ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা গভীর নি¤œচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমদিকে এগিয়ে ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় দানায় পরিণত হয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমদিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
সাগর উত্তাল ॥ বঙ্গোপসাগরের একাংশ এখন থেকেই উত্তাল হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার থেকেই পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। 
আম্পান-ফণীর দুঃসহ স্মৃতি ফেরাতে পারে দানা ॥ ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানায়, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই একটু একটু করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে উপকূলে। শুক্রবার পর্যন্ত ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাস অনুসারে, এই ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি আছড়ে পড়তে পারে। এসময় সেটি ‘সাইক্লোনিক স্টর্ম’ হয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে চলেছে এটি, তখন এর নাম হবে ‘দানা’। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা যতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছেন, তাতে ওড়িশা উপকূলের পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝে কোথাও আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
অনেকের মতে, এটি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং ফণীর মতো শক্তিশালী। ২০১৯ সালের মে মাসে আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘটে হতাহতের ঘটনাও। বাংলাদেশের সরকারি হিসাবমতে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ঘরবাড়ি, বাঁধ, সড়ক ও কৃষিতে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
এ ছাড়া ২০২০ সালের ২০ মে বাংলাদেশে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। এটি একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, যা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ভারতের পূর্বাংশে এবং বাংলাদেশে আঘাত হানে। বাংলাদেশে মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেই আম্ফানের আঘাত ছিল তীব্র।
আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।  
যে কারণে ‘দানা’ নাম ॥ এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘দানা’। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে কাতার। আরবি ভাষায় এই শব্দের অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তা’। তবে এই ঘূর্ণিঝড় কোথা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে অথবা কোথায় এটির ল্যান্ডফল হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
প্রথমে ঝড়ের নামকরণের কোনো নিয়ম ছিল না। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এর জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি তৈরি করেন। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়, যাতে মানুষ ঝড়ের কথা মনে রাখতে এবং শনাক্ত করতে পারেন। একটি নাম দিয়ে সচেতনতা তৈরি ও সতর্কতা পাঠানো যেন সহজ হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা যেমন-বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও), এশিয়ার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়।
ভারতের আইএমডি ছয়টি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে একটি যা ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। এই আবহাওয়া কেন্দ্রগুলো কেবল ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়, তবে নামগুলো এমনভাবে নেওয়া হয় যাতে কারও অনুভূতিতে আঘাত না হয় এবং এই নামগুলোর পুনরাবৃত্তি হয় না।
ইংরেজি বর্ণমালা কে কিউ এক্স, ওয়াই ও জেড-এই পাঁচটি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর যদি ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়, তবে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়। নামকরণের পদ্ধতি অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।
২০০৪ সালে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ঝড়ের নামকরণের জন্য একটি সূত্রে ঐকমত্য পৌঁছেছিল। এই অঞ্চলে যে আটটি দেশ পড়ে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলো ২০০০ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের অনুশীলন শুরু করে।
ভারত ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। এই দেশগুলো ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা সামনে রেখেছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্র সংঘের ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন কিছু নিয়ম তৈরি করেছে। আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের অনুশীলন ১৯৫৩ সালে শুরু হয়েছিল। একই সময়ে, এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তা ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন যুক্ত হয়। যখন একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন এই ১৩টি দেশ তাদের ক্রম অনুসারে নাম নির্ধারণ করে। সোমালিয়ায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তার নামকরণ করেছিল ভারত, যার নাম ছিল গতি। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের নামকরণ করেছে বাংলাদেশ।
খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে তিন লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও ওষুধ। স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব কেন্দ্রে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, খুলনার দুর্বল বেড়িবাঁধগুলোর জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এই আবহাওয়ায় বাঁধগুলো এখন মেরামত করা সম্ভব নয়। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সতর্ক নজর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 
পটুয়াখালীতে ৮২৯ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পটুয়াখালী জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে এ সভা হয়।
সাতক্ষীরাতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ॥ ঘূর্ণিঝড় দানার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ৮৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্র ও  সাইক্লোন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শুক্র ও শনিবারের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাক আহমেদ।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. শাহিনুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় উপজেলার সরকারি ১০২টিসহ মোট ১৬২টি সাইক্লোন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছ। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুত রাখা রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য দুই হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্য, যার মধ্যে অর্ধেক নারী ও অর্ধেক পুরুষ। এ ছাড়া পর্যাপ্ত অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোলার ৫ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ॥ ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় ভোলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পাঁচ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ। ভোলা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, হাতিয়া-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন-মনপুরা ও চরফ্যাশনের বেতুয়া-মনপুরার রুটে লঞ্চ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
‘দানা’ মোকাবিলায় প্রস্তুত বরগুনা ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসন সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আলম বলেন, বরগুনায় দুর্যোগের সময় এখানে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। বিশেষ করে, পল্লীবিদ্যুৎ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।  
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন প্রস্তুত ॥ ঝালকাঠি ঘূর্ণিঝড় দানা প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুর রহমানের সভাপতিত্বে এই সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কাওসার হোসেন ও সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলামসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 
কলাপাড়ায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ॥ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১৭০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিপিপির ৩১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে সকল প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

×