মেয়েদের পোলভল্টে পারফর্ম করছেন ইতালির রবার্টা ব্রুনি
এর আগে আটবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন, তার সঙ্গে কী আর অলিম্পিকের তুলনা চলে? ‘আমি আর কী বলব? অলিম্পিকে নিজেই নিজের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছি। পোল ভল্টারের জন্য এর চেয়ে বড় মঞ্চ আর কি হতে পারে।’ বলছিলেন আরমান্ড ডুপ্লান্টিস। প্যারিসে সুইডিশ পোল ভল্টার স্বর্ণ নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন ৬ মিটার লাফিয়েই। তবে রেকর্ড গড়া যাঁর নেশা, তিনি থামেন কী করে! ডুপ্লান্টিসও থামেননি।
একবার ৬.১০ মিটার লাফানোর পর চেষ্টা করলেন ৬.২৫ মিটার লাফানোর। এ বছরের এপ্রিলে তাঁরই গড়া আগের রেকর্ডের চেয়ে যা ছিল ১ সেন্টিমিটার বেশি। প্রথম দুই চেষ্টায় অল্পের জন্যই পারেননি, তবে তৃতীয় ও শেষ চেষ্টায় ৬.২৫ মিটার পেরিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েই পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে দেন। এ নিয়ে নয়বার বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ২৪ বছর বয়সী অ্যাথলেট।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও স্বর্ণ জিতেছিলেন ডুপ্লোন্টিস। প্যারিসে এদিন ৫.৯৫ মিটার লাফিয়ে রৌপ্য জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাম কেনড্রিকস। ৫.৯০ মিটার লাফিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন গ্রিসের ইমানুইলি কারালিস। সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা পূরণের পথে স্নায়ুচাপ যে কম ছিল, সেটা তো নয়। স্তাদ দ্য ফ্রান্সের এত এত দর্শকের প্রায় সবাই যে তাঁর নামে স্লোগান দিচ্ছিল, সেটা কি তাঁর বুকের মধ্যে ‘ঢিপ, ঢিপ’ শব্দটা বাড়ায়নি! সেই মুহূর্তে নিজেকে কীভাবে ঠিক রেখেছেন? ডুপ্লন্টিসের সহজ উত্তর, ‘আমার পক্ষে যতটা সম্ভব ছিল, আমি নিজের চিন্তাটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেছি।
দর্শক উন্মাতাল হয়ে গিয়েছিল। এত শব্দ হচ্ছিল যে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা আমেরিকান কোনো ফুটবল ম্যাচের মতো।’ উচ্ছ্বসিত ডুপ্লান্টিস এখানেই থামেননি। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৪ বছর বয়সী পোল ভল্টার বলেছেন, ‘এক লাখ ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে (প্রতিযোগিতায় নামার) নামার অভিজ্ঞতা আমার খুবই কম। কিন্তু আমি এভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রে কখনোই ছিলাম না। সবাই আমাকে যে শক্তিটা জোগাচ্ছিল, আমি শুধু সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তারা আমাকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে, এটা কাজে লেগেছে।’
ভক্ত-সমর্থকদের জোগানো এ শক্তি ও সাহস কাজে লাগিয়ে টানা দুটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ও দুটি অলিম্পিক স্বর্ণ জিতলেন ডুপ্লান্টিস। তবে প্যারিস অলিম্পিকে জেতা ডুপ্লান্টিসের স্বর্ণ পদকটিই হয়তো বেশি মনে থাকবে অ্যাথলেটিকসপ্রেমীদের। বিশেষ করে তাঁর ৬ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতা পেরোনো লাফটি যুগ যুগ গেঁথে থাকবে মানুষের চোখে, মনে। এ দৃশ্য যে সত্যিই অবিস্মরণীয়। সুইডিশ ডুপ্লান্টিসের জন্ম আমেরিকার লুসিয়ানায়। ২০২২ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন, এরপর চলে তার রেডর্ক ভাঙা-গড়ার খেলা।