জয়রথ চলছেই মার্কিন টেনিস তারকা ড্যানিয়েল কোলিন্সের
টেনিস কোর্টে দুর্দান্ত সময় কাটছে ড্যানিয়েল কোলিন্সের। গড়লেন ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জয়ের নজির। মিয়ামি ওপেনের পর সদ্যসমাপ্ত চার্লস্টন ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন আমেরিকান তারকা। এর ফলে ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমটা যেন স্বপ্নের মতোই কাটছে কোলিন্সের। ৩০ বছর বয়সী এই তারকার চোখ এখন ফ্রেঞ্চ ওপেনে। মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টেও নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে চান বর্তমান বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থাকা এই তারকা।
সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে গ্র্যান্ডস্লামে ড্যানিয়েল কোলিন্সের সেরা সাফল্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ২০২২ সালে মেলবোর্নের সেই ফাইনালে অ্যাশলে বার্টির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছেড়েছিলেন তিনি। তারপরও হাল ছাড়েননি কোলিন্স। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই মৌসুম শেষে অবসরের ঘোষণা দেওয়া আমেরিকান তারকা এখন তার ক্যারিয়ারেরই সেরা সময় পার করছেন।
কেননা, সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুটি মাত্র শিরোপা জেতা এই আমেরিকান তারকা সম্প্রতি জিতেছেন আরও দুটি ব্যাক টু ব্যাক টুর্নামেন্টের ট্রফি। ডব্লিউটিএ ট্যুর পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট মিয়ামি ওপেনের পর চার্লস্টন ওপেনের ট্রফিও তুললেন নিজের শোকেসে।
দীর্ঘ বিরতির পর গত মাসের শেষ সপ্তাহে মিয়ামি ওপেনের ফাইনাল জেতেন ড্যানিয়েল কোলিন্স। শিরোপার লড়াইয়ে তিনি এলিনা রিবাকিনাকে সরাসরি সেটেই (৭-৫, ৬-৩) পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন আমেরিকান তারকা। সেই ট্রফি জয়ের পথে আলেক্সান্দ্রোভা এবং ক্যারোলিন গার্সিয়ার মতো ফেভারিটদেরও পরাজিত করেন তিনি। মিয়ামি ওপেনের পর চারলটন ওপেনেও বাজিমাত করলেন। টুর্নামেন্টের ফাইনালে দারিয়া কাসাতকিবাকে হারিয়ে টানা দুই শিরোপা জয়ের নজির গড়লেন।
ফাইনালে আমেরিকান তারকা ৬-২ এবং ৬-১ গেমে রীতিমতো উড়িয়েই দেন চতুর্থ বাছাই কাসাতকিনাকে। রাশিয়ান তারকাকে হারিয়ে গড়লেন টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের নজির। বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থাকা কোলিন্সের যা ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। শুধু তাই নয়? মিয়ামি ওপেনের পর গড়লেন চার্লস্টন ওপেন জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তিও। তার আগে সর্বশেষ একই মৌসুমে মিয়ামি এবং চার্লস্টন জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস। ২০১৩ সালে। এর আগে ২০০৮ সালেও এই রেকর্ড গড়েছিলেন উইলিয়ামস পরিবারের ছোট মেয়ে।
২৩ মেজর গ্র্যান্ডস্লামজয়ী সেরেনার পর এবার সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন ড্যানিয়েল কোলিন্স। এমন পারফর্মেন্সের পর চলতি মৌসুম শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন কীনা? এমন প্রশ্নও তুলা হয় কোলিন্সকে। তবে তা উড়িয়ে বরং নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন চার শিরোপার মালিক। বরং এমন দাপুটে পারফর্ম করে কোর্টে নিজের সেরা সময়েই র্যাকেট তুলে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কোলিন্স।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার চ্যালেঞ্জ এবং সিদ্ধান্তগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত। এটা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার যে, আমি সিদ্ধান্তটা আমার সেরা সময়েই নিয়েছি। আমি মনে করি এভাবেই কোর্ট থেকে অবসরে নিতে চাই। নিজের সেরা ফলাফল উপহার দিয়েই বিদায় নিতে চাই। আমি জানি, অবসর কিংবা ক্যারিয়ারের সমাপ্তিটা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে করতে চায় কিন্তু আমি বিদায় বেলাতেও চেষ্টা করে যেতে চাই। সত্যি কথা বলতে, অবসরের সিদ্ধান্তটা জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত।’
আগামী ২০ মে থেকে শুরু হবে ফ্রেঞ্চ ওপেন। সেরা ফর্ম নিয়েই মৌসুমের দ্বিতীয় মেজর এই টুর্নামেন্টের মিশন শুরু করতে চান ড্যানিয়েল কোলিন্স। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে অবশ্য বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট রয়েছে। যেখানে খেলে রোঁলা গ্যাঁরোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন কোলিন্সসহ অন্যান্য খেলোয়াড়রা। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে স্টুটগার্ট ওপেন। যেখানে বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ সারির খেলোয়াড়রা।
বর্তমান বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় ইগা সুইয়াটেক, এরিনা সাবালেঙ্কা, এলিনা রিবাকিনা, এমা রাদুকানু, এ্যাঞ্জেলিক কারবার, কোকো গফ, মার্কেটা ভোন্ড্রোসোভা, উনস জেবিয়ার এবং জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো প্রতিনিধিত্ব করছেন। টুর্নামেন্টের পরিচালক মার্কাস গুনথার্ট আসর শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘সর্বপ্রথম এমন একজন খেলোয়াড় (কোকো গফ) এবার খেলছেন যার খেলা দেখার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে থাকি।
দ্বিতীয়ত, চার গ্র্যান্ডস্লামের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের প্রত্যেকেই প্রতিনিধিত্ব করবেন এই আসরে।’ বিশ্ব টেনিসের সাবেক চার নম্বর তারকা এবং টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির ডিরেক্টর এনকি হুবার বলেন, ‘ট্যুর পর্যায়ে উনস (জেবিয়ার) চমৎকার একজন খেলোয়াড়। টেনিসপ্রেমীরা তাকে অসম্ভব ভালোবাসে। চলতি বছরটা দুর্দান্ত শুরু করেছেন জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো। কোর্টে চমক দেওয়ার জন্য সে সবসময়ই সেরা। এছাড়া মার্কেটা ভোন্ড্রোসোভা উইম্বলডনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। সেও স্টুটগার্টে ফিরছে।’
আগামী ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে মাদ্রিদ ওপেন। এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, সিমোনা হ্যালেপের মতো তারকারা। এর ফলে ডোপিংয়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দ্বিতীয় টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন রোমানিয়ান তারকা। মাদ্রিদের এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলেছেন সিমোনা হ্যালেপ।
২০১৬ এবং ২০১৭ সালে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজিরও গড়েন তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে যথাক্রমে মারিয়া শারাপোভা এবং কিকি বার্টেন্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিলেন রোমানিয়ান তারকা। আবারও মাদ্রিদ ওপেনে ফিরে তাই দারুণ খুশি বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান তারকা। তবে এর জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিমোনা হ্যালেপ বলেন, ‘ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। মাদ্রিদ আমার কাছে সব সময়ই বিশেষ এক টুর্নামেন্ট।’