ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশের ফুটবলে নবজাগরণের রূপকার হামজা চৌধুরী বললেন, ‘এ তো সবে শুরু’

উন্মাদনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে আশার হাতছানি

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:১১, ১২ জুন ২০২৫

উন্মাদনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে আশার হাতছানি

এখনই হতাশ হতে চান না হামজা-ফাহমিদুলরা

ঢাকা স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে যে উন্মাদনার তৈরি হয়েছিল তার কারণ যে হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সেটি না বললেও চলে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপানোর পর থেকেই বদলে গেছে দৃশ্যপট। ফুটবলে ফিরে এসেছে আশি-নব্বইয়ের দশকের সেই প্রাণ। স্কোর শিট বলছে ম্যাচটা বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরে গেছে। কিন্তু র‌্যাংকিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ৪২ শতাংশ বল দখলে রেখে ৩৪ বার আক্রমণে গেছেন ফাহমিদুল-রাকিবুলরা, যার ২৬টিই ছিল বিপজ্জনক।

দ্বিতীয়ার্ধের শেষভাগে তো মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়েছে জ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা, পেনাল্টি বঞ্চিত হতে হয়েছে বিতর্কিতভাবে। ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ না হয়ে এভাবেই পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন হামজা, বলেছেন,‘এ তো সবে শুরু’। আর আফসোসের হার থেকেই উজ্জীবিত হওয়ার রসদ খুঁজছেন বস্ ক্যাবরেরা। শেষদিকে ছেলেদের এমন আক্রমণাত্মক ফুটবলে খুশি বাংলাদেশ কোচ।
‘আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম, তা হয়নি! কিন্তু দল ও জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি!! আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। কারণ এটা তো মাত্র শুরু। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাব, যেখানে পৌঁছাতে চাই! ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ। দেখা হবে অক্টোবরে।’ সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের উদ্দেশে লিখেছেন হামজা। মঙ্গলবার ম্যাচ শেষ করে বুধবার ভোরেই হামজা ইংল্যান্ড ও সামিত সোম কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের অভিষেকেই নজর কেড়েছেন সামিত।

হামজা-ফাহমিদুল ইসলামের সঙ্গে এই মিডফিল্ডারের বোঝাপড়াটাও ছিল দেখার মতো। নিজের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এই দলের অংশ হতে পেরে অনেক গর্বিত আমি। সতীর্থ, কোচিং স্টাফ, বাফুফের সব সদস্য ও ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ, এভাবে গ্রহণ করার জন্য। এ তো সবে শুরু।’ প্রায় একই সময়ে জাতীয় দলের স্প্যানিশ হেড কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাও স্পেনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেন রাকিব হোসেন। এর মধ্যে শিষ্যদের বেশ কিছু ভুল নিয়ে ক্যাবরেরাও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। বাংলাদেশের একটি পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেওয়া এবং দ্বিতীয়ার্ধে মোরছালিন, আল-আমিনের বদলির সময় সময় নষ্ট হওয়ার বিষয় নিয়ে রেফারির বিরুদ্ধে অবশ্য সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি কোচ।
ক্যাবরেরার বক্তব্য,‘আমি ঠিকঠাক দেখিনি, তাই বলতে পারছি না।’ বাংলাদেশ খারাপ খেলেছে, না সিঙ্গাপুর খুব ভালো খেলেছে ? ‘এমন ফল প্রত্যাশিত নয়। আমার মনে হয় সিঙ্গাপুরের শুরুটা ভালো ছিল। এক প্রাণশক্তিতে এবং দ্বিতীয়ত হাই প্রেসিংয়ে শুরু করে তারা। প্রথম ১৫-২০ মিনিটে আমরা কিছু ভুল করেছি। ওখানেই আমরা উদ্যম হারিয়ে ফেলেছি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে যা খেলেছি, তাতে আমাদের গর্ব করা উচিত।’ বাংলাদেশ ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছে দুই গোল হজমের পর।

ফিনিশিং ভালো হলে চলে আসতে পারত দ্বিতীয় গোলও। ক্যাবরেরা বলেন,‘দ্বিতীয় অর্ধে ছেলেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি, অন্তত একটা পয়েন্ট (ড্র) আমাদের প্রাপ্য ছিল। প্রতিপক্ষ তাদের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছে।’ বাংলাদেশের হয়ে এটি ছিল হামজা চৌধুরীর তৃতীয় ম্যাচ। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এবং ৪ জুন ঢাকায় ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে তাঁকে যতটা প্রাণবন্ত দেখা গেছে, এবার ততটা নয়। 
বাংলাদেশ কোচের মতে, প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তাই এখানে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে,‘ভারত ওপরে খেলেছিল। তাই আমরা আক্রমণের জায়গা পেয়েছি। কিন্তু সিঙ্গাপুর আমাদের জায়গা দেয়নি। তাদের রক্ষণ জমাট ছিল।’

×