ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে এবারের আসরে সর্বোচ্চ সাফল্যের স্বপ্ন বুনছে টাইগাররা

আট বছর পর আবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মাঠে গড়াচ্ছে আজ। ২০১৭ সালে হওয়া সর্বশেষ আসরে বাংলাদেশ দল খেলেছে সেমিফাইনাল। তবে পারফর্ম্যান্সের হিসেবে এখন পর্যন্ত ৫ আসরে ১২ ম্যাচ খেলে মাত্র দুটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। সাম্প্রতিক সময়ে দলগতভাবে ক্রমেই এই ফরম্যাটে পিছিয়ে পড়েছে তারা।

এমনকি ৭ নম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা টাইগাররা এখন ৯ নম্বরে। সবমিলিয়ে বিশে^র ক্রিকেট বোদ্ধারা এবার বাংলাদেশের সম্ভাবনা কমই দেখছেন। চলতি বছর কোনো ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। তবে মূল লড়াই শুরুর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান ‘এ’ দলের কাছে বড় হার আরও চ্যালেঞ্জে ফেলেছে নাজমুল হোসেন শান্তদের। যদিও অধিনায়ক শান্ত সর্বশেষ আসরে দলের যে অর্জন তার নিরিখে আশাবাদ জানিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।

সেক্ষেত্রে এবারের আসরে ব্যাটিংয়ে উন্নতির কোনো বিকল্প নেই। কারণ বোলিংয়ে একটানা দুর্দান্ত করছে বাংলাদেশ, ফিল্ডিংও ভালো হচ্ছে যথেষ্ট। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যাটিং ব্যর্থতায় পরিষ্কার ভালো কিছু করার জন্য অবশ্যই অভাবনীয় কিছু করতে হবে।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ। এদিন প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। যারা গত আসরেই হয়েছে রানার্সআপ। বর্তমানে ওয়ানডে বিশ^কাপেরও রানার্সআপ তারা। দুবাইয়ের এই ভেন্যুতে ৬ ওয়ানডে খেলে হারেনি ভারত। সে কারণে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে তারা।

এখানে বাংলাদেশ খেলেছে ৩ ওয়ানডে, দুটি হারের পাশাপাশি জিতেছে ১টি। আর একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান শাহীন্সের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে এটিই চলতি বছর প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ দলের। ম্যাচে মাত্র ৩৮.২ ওভারেই ২০২ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। তাই সন্দেহাতীতভাবেই মূল লড়াইয়ে ভালো করার জন্য ব্যাটিংয়ে বড় উন্নতির বিকল্প নেই। ব্যাটিং ধারাবাহিকতার এই ঘাটতি বারবারই বাংলাদেশের সাফল্যের অন্তরায়।

এখন ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করছেন দেশের স্বনামধন্য কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার অধীনে সর্বশেষ গত বছর নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যাটিংয়ে বেশ উন্নতি দেখা গেছে। প্রস্তুতি ম্যাচে ভরাডুবি হলেও তাই মূল ম্যাচে ব্যাটারদের জ¦লে উঠতে দেখার আশায় আছে বাংলাদেশ দল। সৌম্য সরকার এই ফরম্যাটে বেশ ছন্দে আছেন, মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে ভালো করছেন নিয়মিত।

তরুণ ওপেনার তানজিম হাসান তামিম ক্রমেই নিজেকে প্রমাণ করছেন। শেষদিকে বড় আশা রিশাদ হোসেনকে নিয়ে। লেগস্পিনের পাশাপাশি তার ব্যাট কথা বললে যেকোনো ম্যাচের ভাগ্য দিক বদলাতে পারে। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপের সাথে দুর্ধর্ষ বোলিং বড় চ্যালেঞ্জে ফেলবে বাংলাদেশকে। 
অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ভালো অবস্থায় আছেন। তবে অধিনায়ক শান্ত, তাওহিদ হৃদয় ভুগছেন লম্বা সময় ধরে। আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম বিরতি নিয়ে ফিরেছেন। তার ব্যাট থেকে বড় কিছুর আশায় থাকবে দল। এর অন্যথা ঘটলে সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে। প্রস্তুতি ম্যাচে যে উইকেটে খেলা হয়েছে সেখানে অবশ্য খেলা হবে না। এই টুর্নামেন্টের জন্য একেবারে অব্যবহৃত অবস্থায় রাখা হয়েছে দুটি উইকেট।

তরতাজা উইকেটে খেলা হলে স্পোর্টিং আচরণ করবে সেটি। ব্যাটিং, পেস ও স্পিনে সমানতালে সুবিধা পাওয়া যাবে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের বাকি দুই প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান। সেই ম্যাচ দুটি হবে ব্যাটিং স্বর্গোদ্যান হিসেবে পরিচিত রাওয়ালপিন্ডিতে। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের মাটিতে হওয়া ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিউইরা নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছে।

তারা এই মুহূর্তে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও আছে ৪ নম্বরে। তবে ৪৫ বারের মুখোমুখিতে তাদের ১১ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৩ ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও ১টি ম্যাচ জিতেছেন শান্তরা। তাই আশা রয়েছে এ ম্যাচটিকে ঘিরেও। গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতেই ২ টেস্টের সিরিজে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়ানডেতে ভিন্ন দল পাকরা।

কিছুদিন আগেই ৩৫২ রান তাড়া করে জিতেছে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং সেটি তাদের রেকর্ড রান তাড়া। তাছাড়া র‌্যাঙ্কিংয়েও এখন ৩ নম্বরে আছে পাকরা। ২০১৮ সালের পর পাাকিস্তানের বিপক্ষে জেতেনি বাংলাদেশ। সার্বিকভাবে ৩৯ মোকাবেলায় মাত্র ৫ বার পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই তাদেরই মাটিতে এত বড় আসরে ওয়ানডে জেতা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশ দলের জন্য।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সবমিলিয়ে ১২ ম্যাচ খেলে ৯ হার, ২ জয়ের পাশাপাশি একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের। গত দুই বছরে ৪১ ওয়ানডেতে ১৪ জয়, ২৪ হারে এখন র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে তারা। তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবতা বেশ কঠিন।

×